আন্দোলন হোক, শুধু ব্যক্তি আক্রমণ নয়, বার্তা বিমানের
তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের বয়স এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে এ বার আন্দোলনের মাত্রা বাড়াতে চাইছে প্রধান বিরোধী দল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় জেলায় বিষয়ভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিল তারা। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে আগামী দু’মাসের আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। জনজীবনে প্রভাব ফেলার মতো বিষয়গুলি চিহ্নিত করে আন্দোলনে নামার পাশাপাশিই দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর পরামর্শ, ‘ব্যক্তি’ নয়, আক্রমণ করতে হবে ‘নীতি’কে।
শনি ও রবিবার সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে মূলত আন্দোলম কর্মসূচি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। নতুন সরকারকে ‘সময় দেওয়া’র কৌশল নিয়েই এত দিন চলছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, রাস্তায় নেমে আন্দোলনের তীব্রতা তারা তত বাড়াতে চায়। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে আগামী সেপ্টেম্বরে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হবে বলেও প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। কিন্তু সরকার-বিরোধিতার সুর চড়াতে গিয়ে ‘ব্যক্তি আক্রমণ’ যাতে মাত্রা না-ছাড়ায়, সেই বিষয়েও বিমানবাবু দলকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। রাজ্য কমিটির বৈঠকে তিনি বলেছেন, দলে কেউ কেউ আছেন, যাঁদের বক্তব্য ব্যক্তি আক্রমণ দিয়েই শুরু এবং ব্যক্তি আক্রমণ দিয়েই শুরু হয়। ওই পথে না-গিয়ে সরকারের নীতি ধরে ধরে বিরোধিতার রাস্তায় গেলে তা যে সাধারণ মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, তা-ই বোঝাতে চেয়েছেন বিমানবাবু।
দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, নাম না-করলেও বিমানবাবুর এমন বার্তার লক্ষ্য আসলে গৌতম দেবের মতো কিছু নেতা। যাঁদের বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই থাকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি চাঁছাছোলা আক্রমণ। তুলনায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্য বিষয় ধরে ধরে অনেক বেশি ‘সাজানো’। মমতার বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণে’ জনমানসে যে বিশেষ সাড়া মিলছে না, তা বুঝেই বিমানবাবু নীতি-ভিত্তিক প্রতিবাদের কথা বলেছেন বলে দলের ওই অংশের ব্যাখ্যা। আবার সিপিএমেরই অন্য একটি অংশের অভিমত, নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে কিছু ধারালো আক্রমণ কাজে লাগে। শুধুই ‘সর্বনামে বক্তৃতা’ ও বিষয়-ব্যাখ্যা নিচু তলায় ততটা প্রভাব ফেলে না। তবে নিচু তলাকে উৎসাহ দিতে গিয়ে কেউ যাতে মাত্রা ছাড়িয়ে না-যান, সেই দিকেই খেয়াল রাখতে বলেছেন রাজ্য সম্পাদক।
রাজ্য কমিটির জবাবি ভাষণে বিমানবাবু এ দিন বলেছেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের দাবিদাওয়া ছাড়াও স্থানীয় বিষয় চিহ্নিত করতে হবে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। যে অংশের মানুষের কাছে যে বিষয় সব চেয়ে গ্রহণযোগ্য, তাকেই বেছে নিতে হবে। শহর ও গ্রামের অসংগঠিত শ্রমিকদের রুটি-রুজি ও সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলনের উদাহরণ টানেন বিমানবাবু। শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের পাশাপাশি গোটা দলকেই আন্দোলনের প্রশ্নে আরও ‘তৎপর’ হতে আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। পূর্ব ঘোষণা মতোই এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। বস্তুত, আন্দোলন-পর্বে আজ, সোমবার থেকেই মাঠে নামা শুরু হচ্ছে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামেদের। মূল্যবৃদ্ধি, গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ, কৃষকদের আর্থিক দুর্দশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি আম জীবনের ‘প্রাসঙ্গিক ও জরুরি’ প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখে আজ জেলায় জেলায় আইন অমান্য হবে।
একই প্রশ্নে কাল, মঙ্গলবার কলকাতা ও শিলিগুড়িতে কেন্দ্রীয় ভাবে আইন অমান্য কর্মসূচি রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ৯০ বছর বয়সেও মঙ্গলবারের আইন অমান্যে অংশগ্রহণ করতে চান ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। অগস্ট জুড়ে চলবে খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে কর্মসূচি, যা দিল্লি থেকে রাজ্যের নানা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত চলবে। বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে কৃষক সভাকে ময়দানে নামানো হচ্ছে অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মহকুমা স্তর পর্যন্ত নানা কর্মসূচি নিয়ে। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করব না। মানুষ রোজকার অভিজ্ঞতায় যা দেখছেন, তা-ই আমরা আন্দোলনে নিয়ে আসতে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.