নীরবেই চলে গেলেন নির্জনতার কবি বীতশোক
থা ছিল না। সময় তো তেমন হয়নি। তবুও চলে যেতে হল। সত্তরের দশকের সূচনায় কবিতাগুচ্ছ ‘স্বপ্নসম্ভব’-এর মধ্যে দিয়ে বাংলা পাঠককূলের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁর লেখনী বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছে, তাঁর শিক্ষকতা ছাত্রদের অমুল্য রতনের সন্ধান দিয়েছে। সেই অশোক ভট্টাচার্য, যিনি বীতশোক ভট্টাচার্য নামেই বেশি পরিচিত, মাত্র ৬১-তেই চলে গেলেন শনিবার সকালে। গত সোমবার প্রচণ্ড জ্বর ও বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ে তাঁকে কলকাতার এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। শনিবার সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
নানা ছোট পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বীতশোক ভট্টচার্যের কবিতা বাংলা পাঠককে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন
করে। মেদিনীপুরের মতো এক মফস্সল শহর থেকেই তাঁর সৃস্টি ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। সত্তরের দশকের অন্য কবিদের সঙ্গে তাঁকে এক সারিতে বসাতে পাঠকদের দেরি হয়নি। কবি মণীন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘তিন জন কবি’ সিরিজের অন্যতম ছিলেন বীতশোক। অনেকের মতে, তাঁর কবিতা যেন ছিল এক ঝলক নতুন বাতাস। তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘অন্য যুগের সখা’, ‘শিল্প’, ‘এসেছি জলের কাছে’, ‘জলের তিলক’, ‘বসন্তের এই গান’, ‘কবিতা সংগ্রহ’ ইত্যাদি। তিনি লিখেছিলেন, “যে পথ গিয়েছে বেঁকে, তুমি সে পথের শেষে দূরত্বের মতো।” লিখেছিলেন, “কে তুমি আজ হরিণ ধাও সঘন স্রোতে, গহনে।” পাশাপাশি ছিল অধ্যাপনার জগত। মেদিনীপুর কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে ছাত্রদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য লিখেছিলেন ‘চর্যাপদ’, ‘জীবনানন্দ’, ‘পূর্বাপর’ ইত্যাদি বই।
মেদিনীপুরের বড়বাজারের বাসন্তীতলার বাড়ি থেকে যে মানুষটিকে ধীর পায়ে মেদিনীপুর কলেজে যেতে দেখতেন সবাই, তাঁকে কিছুটা অন্তর্মুখী আর স্বল্পভাষী বলে মনে হত। তবু আত্মীয়, বন্ধু, পরিচিত, এমনকী ছাত্রছাত্রীদের কাছেও তিনি ছিলেন ‘দাদামণি’। ছাত্র তথা কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “একজন কবিকে কতখানি অন্তর্মুখী আর নির্জন হতে হয় তা শিখিয়েছিলেন তিনিই।” নির্মাল্যর শেষ কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখে দেন বীতশোক। শেষ দেখা হওয়ার মুহূর্তে নির্মাল্যকে বলেছিলেন, “কোনও সৃষ্টিই বাজারের জন্য নয়, তা ধ্যানের জিনিস।” নির্মাল্য তাই বলেন, “আমরা অভিবাবক হারালাম।” আর এক কবি অনিল ঘড়াইয়ের মতে, “বাংলা সাহিত্যকে তাঁর আরও কিছু দেওয়ার ছিল।”
কবি না শিক্ষক, কোন বীতশোক বড় তা বিতর্কের বিষয় হতেই পারে। কিন্তু একবাক্যে সবাই যা মানবেন তা হল তিনি ছিলেন একজন নিপাট ভালমানুষ। ‘কবিতার অ-আ-ক-খ’-র লেখক চলে গেলেন হঠাৎ-ই। রেখে গেলেন সহধর্মিনী কবিতাদেবীকে, অসংখ্য গুণমুগ্ধ আর ছাত্রছাত্রীকে। রয়ে গেল তাঁর সৃষ্টিসম্ভার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.