শিলচরের ছাত্র প্রীতম ভট্টাচার্যের গলা কাটা দেহ মিলল বিহারের নওগাছিয়ার কাছে রেললাইনের পাশে। আজ সকালে নওগাছিয়া থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কাটারিয়া গ্রামের কাছে রেললাইনের ধারে দেহটি দেখতে পায় গ্রামবাসীরা। এরপরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। প্রীতমের কাকা রামমোহন ভট্টাচার্য সেখানে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন। ময়না তদন্তের জন্য দেহটি ভাগলপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত সোমবার গুয়াহাটি থেকে প্রীতম পিএইচডি-র জন্য নাম নথিভুক্তি করাতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। অবধ-আসাম এক্সপ্রেসে চেপে যাওয়ার সময় বিহারের নওগাছিয়া স্টেশনে তাঁর ব্যাগটি চুরি করে পালায় দু’জন। ট্রেন থেকে নেমে তাদের পিছু নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিখোঁজ হয়ে যান ২৫ বছরের প্রীতম। নওগাছিয়া রেল স্টেশনে জিআরপি-র কাছে প্রীতমের কাকা রামমোহনবাবু সেই সময় নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জানান। পুলিশ পরে তৎপরও হয়। ভাগলপুরের পুলিশ সুপার কাল রাতেও আশ্বাস দিয়েছিলেন, শীঘ্রই নিখোঁজ ওই মেধাবী ছাত্রের হদিশ মিলবে। হদিশ মিলল, কিন্তু তার নিথর দেহের।
আজ সকাল দশটা নাগাদ রেল পুলিশ রামমোহনবাবুকে ফোনে ডেকে পাঠায়। রামমোহনবাবু চারদিন ধরে গুয়াহাটি থেকে এসে পটনায় রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও তিন আত্মীয়। এ দিন সকালে ফোন পেয়ে প্রীতমের কাকা-সহ আত্মীয়েরা ভাগলপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা প্রীতমের দেহটি শনাক্ত করেন। এ দিন শিলচরের বাড়িতে ফোন করে বাবা শঙ্কর ভট্টাচার্য এবং মা উৎপলা দেবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। প্রীতমের মামী শতরূপা ভট্টাচার্যও শোকে মুহ্যমান হয়ে ছিলেনা। তবুও কোনও রকমে তিনি বলেন, “কী যে হয়ে গেল! এমন একটি মেধাবী ছেলের জীবন এই ভাবে শেষ হয়ে গেল! বিহারে এখনও সেই জঙ্গল রাজ চলছে।”
কাকা রামমোহনবাবু বলেন, “মাথাটি দেহ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। কী এমন দোষ করেছিল আমার ভাইপো যে তাকে এরকম নৃশংস ভাবে খুন করা হল? বিহারে তো মানুষের কোনও নিরাপত্তা নেই দেখছি। আমরা এখন কোন মুখে শিলচরে ফিরব বলতে পারেন? দেহটি যে অবস্থায় রয়েছে তাতে এত দূরে তা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এখানেই আমরা দেহের সৎকার করব বলে ঠিক করেছি।”
রামমোহনবাবু বলেন, “ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ছেলেগুলিকে চেনেন বলে আমাদের সন্দেহ। কারণ ওরা নিয়মিত ট্রেনে চুরি-ছিনতাই করে বেড়ায়। টিকিট পরীক্ষক ভয়ে হয়তো কিছু বলতে চান না।”
নওগাছিয়া পুলিশ জেলার সুপার জয়ন্ত কান্ত বলেন, “দেহটি গলা কাটা অবস্থায় রেল লাইনের ধার থেকে পাওয়া গিয়েছে। দেহটি দেখে মনে হয়েছে, কাল রাতেই ছেলেটিকে খুন করা হয়েছে। ছেলেটির কাকা শনাক্ত করেছেন। আমরা অপরাধীদের খোঁজে আছি।” |