ডিমাসা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে শান্তি আলোচনা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ডিমারাজি আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের শর্তে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আগেই চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ সময়ে চলছে প্রক্রিয়াগত কাজকর্ম। আর চুক্তি স্বাক্ষরের দিন যত এগোচ্ছে, কাছাড়ে অ-ডিমাসা জনগোষ্ঠীর মধ্যে উৎকণ্ঠার মাত্রা তত বাড়ছে।
ডিমা হালাম দাউগা (ডিএইচডি) কাছাড় জেলার ১৮টি রাজস্ব গ্রামকে প্রস্তাবিত পরিষদে অন্তর্ভুক্তির দাবি করে চলেছে। একে ঘিরে এখানকার মানুষজন উদ্বিগ্ন। তাঁরা দাবির বিরোধিতায় জোটবদ্ধ হচ্ছেন। শুরু হয়েছে সভা-সমিতি। শিলচরের ইউনিয়ন টেরিটরি ডিমান্ড কমিটি (ইউটিডিসি) দুই জেলার সীমা সংলগ্ন গ্রামগুলিতে গিয়ে সভা-সমিতি করছে। মঙ্গলবার কাছাড়ের জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে ধর্না দেওয়া হয়।
অন্য দিকে এআইইউডিএফ, নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি, আদিনাথ সমাজ সুরক্ষা সমিতি-সহ বিভিন্ন সংগঠন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে স্মারকপত্র পাঠাচ্ছে। বুধবারও তিন দফা দাবিতে অল বরাক ইউথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (অহিসা)-র পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো হয়।
সংগঠনের মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়াঁ জানান, কাছাড়ের যে সব গ্রাম পরিষদে ঢোকানোর দাবি করা হচ্ছে, এদের কোনওটিতে ডিমাসা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি নয়। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনে আজ শিলচরে নাগরিকসভা ডেকেছিল অবিসা। ইউটিডিসি-ও শীঘ্রই শিলচরে একটি কেন্দ্রীয় সভা করার কথা ভাবছে।
ডিএইচডি’র প্রধান পরিতোষ পালচৌধুরীর পাল্টা প্রশ্ন, এক সময় পুরো কাছাড় জেলাটাই ছিল ডিমাসা রাজার অধীনে। তা হলে তারা শুধু এই কটি গ্রামের দাবি করছে কেন? তাঁর কথায়, ১৯৫২ সালে জেলার সীমা নির্ধারণের পর এখন শুধু দেখা দরকার, ওই সব গ্রামে তাদের জন সংখ্যার হার কত। দশ শতাংশের কম মানুষের জন্য কি ৯০ শতাংশ মানুষকে জেলা বদলাতে হবে, যেখানে অ-উপজাতিদের জমি কেনা-বেচার সুযোগ থাকবে না?
তবে, কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর আসনের কংগ্রেস বিধায়ক দীনেশপ্রসাদ গোয়ালা বলেন, টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের সীমা নিয়ে কাছাড়ের মানুষের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। জেলার সীমা পুনর্গঠনের জন্য রাজ্য সরকারের একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে সাব-কমিটি গঠন করতে হয়। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। অসমে এ ধরনের কোনও সাব-কমিটি গঠন করা হয়নি। সেইসঙ্গে তিনি শুনিয়ে রাখেন, কোনও সময় এমন কথা উঠলে তিনিই এর বিরোধিতায় সোচ্চার হবেন।
তবু যেন আশ্বস্ত হতে পারছেন না হরিনগর, কুম্ভা, ঠালিগ্রাম, টিকলপারের মানুষজন। তাঁরা বলেন, শেষপর্যন্ত যদি সরকার ডিএইচডি-র দাবি মেনে নেয়, তবে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কারণ আঞ্চলিক পরিষদে অ-উপজাতিরা জমি কেনা-বেচা করতে পারবেন না। সরকারি সুবিধে মেলে না বললেই চলে। তাঁদের কথায়, “কাছাড়ের গ্রাম নিয়ে ডিমারাজি পরিষদ, এ আবার কেমন কথা! শত শত বছর আগে থেকে আমরা এই জেলার বাসিন্দা। যে ডিমাসা রাজত্বের কথা বলা হচ্ছে, সে সময়ও এই সব গ্রাম কাছাড়ের অংশ ছিল।” |