ভূস্বর্গে মেলালেন তিনি। জানালেন, শেষ পর্যন্ত বাংলাতেও মিল হবে বলে তাঁর আশা।
কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স শুধু নয়, তাদের কট্টর বিরোধী মুফতি মহম্মদ সইদের পিডিপি-ও আজ জানিয়ে দিয়েছে, ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই ভোট দেবে তারা। এ ব্যাপারে এক রা অন্যান্য ছোট দল ও নির্দল বিধায়ক ও সাংসদদেরও। কিন্তু ইউপিএ-র দ্বিতীয় বড় শরিক তৃণমূলই যে তাঁর পাশে নেই! ঘুরে ফিরে আজ
|
ছবি: পিটিআই |
বারবারই সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় প্রণববাবুকে। যদিও তিনি কোনও রকম নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। বরং বুঝিয়েছেন, সবাইকে নিয়েই চলতে চান তিনি। জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকেই শ্রীনগরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার প্রসঙ্গ তোলা হয় প্রণববাবুর কাছে। তৃণমূল নেত্রীকে চিঠি পাঠানোর কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও মমতা শেষ পর্যন্ত তাঁকেই সমর্থন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রণববাবু।
রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন চাইতে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর আসমুদ্রহিমাচল সফর করে ফেললেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর এই ভারত সফরের আজ ছিল ভূস্বর্গ পর্ব। এই পর্বে তাঁকে ঘিরে এমন এক ঐক্যের ছবি দেখা গেল, জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতিতে যা বিরলতমই বলা যায়। বিহারে লালুপ্রসাদ ও নীতীশ কুমার কিংবা উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহ যাদব ও মায়াবতীর যা সম্পর্ক, জম্মু-কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি-র সম্পর্কটা তার চেয়ে কম তিক্ত নয়। রাজ্য রাজনীতিতে আদায়-কাঁচকলায় হলেও, মায়া-মুলায়ম উভয়েই কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের সমর্থক। রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ-র প্রার্থীকে সমর্থনের প্রশ্নেও তাঁরা ঐকমত্য। কিন্তু রাজ্যে জোট বাঁধা তো দূর কেন্দ্রেও ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি-কে কখনওই একই সরকারের পাশে থাকতে দেখা যায় না। কাশ্মীরের এ-হেন দুই কট্টর প্রতিপক্ষকে আজ এককাট্টা হতে দেখা গেল প্রণববাবুকে সমর্থনের প্রশ্নে। |
ওমর আবদুল্লার সমর্থন চাইতে কাশ্মীরে প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই |
দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে বেশ কিছু বদল অবশ্য ইউপিএ তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করার আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে। নীতীশ কুমারের মতো এনডিএ শরিক শুধু নয়, বিজেপি-র অতিঘনিষ্ঠ সঙ্গী শিবসেনাও জোটধর্মের আগল খুলে প্রণববাবুকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে। কর্নাটকে গদি ফিরে পাওয়ার জন্য চাপের রাজনীতি করতে গিয়ে প্রণববাবুকে সমর্থনের প্রশ্নকে বাজি ধরতেও পিছপা হননি বিজেপি-র ‘বিদ্রোহপ্রবণ’ নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মুখে মূলত দলের ভোট এক জায়গায় ধরে রাখায় দায়েই ইয়েদুরাপ্পার আবদার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
কাশ্মীরে কিন্তু বিরুদ্ধ শিবিরে ভাঙন নয়, গোটা বিরোধী শিবিরটাই এখন তাঁর পাশে। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শরিক ন্যাশনাল কনফারেন্স। রাজ্য সরকারে কংগ্রেস তাদের শরিক। ফলে প্রত্যাশিত ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের ২৮ জন বিধায়ক, ৫ জন সাংসদ ও লাদাখের নির্দল সাংসদ সমর্থন করবেন প্রণববাবুকে। কংগ্রেসের ১৭ জন বিধায়ক ও ৪ জন সাংসদ রয়েছে এ রাজ্যে। প্রণববাবু আসবেন বলে দু’দিন আগেই শ্রীনগরে চলে আসেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সইফুদ্দিন সোজ। তিনি আজ বিমানবন্দরে গিয়ে স্বাগত জানান প্রণববাবুকে। নিজেদের শিবিরের বাইরে পিডিপি নেতা মুফতি মহম্মদ সইদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রণববাবু। পরে পিডিপি-র মুখপাত্র নইম আখতার বলেন, “আমরা তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছি।”
তাঁকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ কারাটের দলে সমস্যা তৈরি হলেও, প্রণববাবু এ দিন উপত্যকার সিপিএম নেতা এম ওয়াই তারিগামির সঙ্গে দেখা করেন। কথা বলেন পিডিডিএফ নেতা হাকিম ইয়াসিন ও নির্দল বিধায়ক এর রশিদের সঙ্গেও। এঁরা সকলেই জানিয়েছেন, প্রণববাবুর পাশে আছেন তাঁরা। ভূস্বর্গের রাজনীতিতে এমন ঐক্য শেষ কবে দেখা গিয়েছে? বাকি রইল বাংলা! |