রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থন চেয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় যে তাঁকেও চিঠি পাঠিয়েছেন, নিজেই এ বার সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজ-এ রবিবার প্রণববাবুর আবেদন-পত্র ‘আপলোড’ করা হয়েছে। ‘আমার প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধনে শুরু এই চিঠিই দেশের সব সাংসদ-বিধায়ককে পাঠিয়েছেন প্রণব। মমতা কিন্তু এই আবেদন-পত্রে বিশেষ ‘সন্তুষ্ট’ নন। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারাই বলছেন, চিঠিতে প্রণব অন্তত মমতার নামটা উল্লেখ করতে পারতেন।
প্রচার-পর্বে গোটা দেশের সাতশোরও বেশি সাংসদ এবং কয়েক হাজার বিধায়কের উদ্দেশেই প্রণববাবু আবেদন-পত্র পাঠাচ্ছেন। যে চিঠির শুরুতে ‘আমার প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন। এখানেই প্রশ্ন তৃণমূল নেত্রীর। মমতা-ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “বাকি সব সাংসদ-বিধায়কও প্রিয় বন্ধু, দলনেত্রীও প্রিয় বন্ধু! দলের প্রধানকে চিঠি পাঠানোর সময় অন্তত নামটা কি উল্লেখ করা যেত না?” মমতা যে ‘অসন্তুষ্ট’ তা বুঝেই তৃণমূল শিবির মনে করছে, প্রণবকে প্রার্থী করা নিয়ে যে ‘তিক্ততা’ তৈরি হয়েছে, তাতে এই চিঠি প্রলেপ দেবে কি না সন্দেহ।
প্রণববাবু অবশ্য যথারীতি তৃণমূল নেত্রীর সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে আশাপ্রকাশ অব্যাহত রেখেছেন। শ্রীনগরে প্রচারে গিয়ে মমতা-প্রসঙ্গে এ দিনই তিনি বলেছেন, “আমি সমর্থনের জন্য ওঁকে অনুরোধ করেছি। আমি আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত উনি আমাকেই সমর্থন করবেন।” তিনি যে রোজই এক বার করে মমতার সমর্থন চান, তাও উল্লেখ করেছেন প্রণব। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “কিছু ব্যক্তি তাঁর (মমতার) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।” কারা যোগাযোগ রাখছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তবে বলেছেন, “উনি তো জানিয়েইছেন, ভোটের আগে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
বস্তুত, কয়েক দিন আগে উত্তরবঙ্গ সফর-কালেই প্রণববাবুর চিঠি পৌঁছেছে মমতার কাছে। তৃণমূলের আরও কিছু সাংসদ এবং বিধায়ক তখনই প্রণববাবুর চিঠি পেতে শুরু করেছিলেন। বিধায়ক হিসেবেই মমতা এই চিঠি পেয়েছেন। তবে ফেসবুকে এ দিন চিঠিটি ‘আপলোড’ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে আমি আজ একটি চিঠি পেয়েছি’। এ ছাড়া সেখানে মমতার তরফে আর কোনও মন্তব্য করা হয়নি। প্রসঙ্গত, প্রণববাবুর চিঠিটির তারিখ ২ জুলাই। গত ৯ জুলাই কলকাতায় এসে বাম এবং কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করার সময়েও প্রণববাবুর তরফে এই একই আবেদন-পত্র তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, “কোনও দল বা দলের নেতা হিসেবে আলাদা করে কোনও আবেদন করা হচ্ছে না। সাংসদ-বিধায়কদের কাছে প্রণববাবু একই চিঠি পাঠাচ্ছেন। সেটাই সাধারণ আবেদন।”
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর দলের জন্য মমতা কী অবস্থান চূড়ান্ত করবেন, তা নিয়ে কৌতূহল এবং জল্পনা অব্যাহত। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ধারণা, সব দিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত মমতা ভোটদানে বিরত থাকারই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তাঁকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। মমতাও উপরাষ্ট্রপতি ভোটের বেলায় প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার পথে হাঁটেননি। এমনকী, প্রণবের চিঠি নিয়ে ফেসবুক পেজ-এ কোনও ইঙ্গিতবাহী মন্তব্যও করেননি। তবে ঘনিষ্ঠমহলে নিজের ‘অসন্তুষ্টি’ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে, এর ফলে মমতা কংগ্রেসের সঙ্গে তিক্ততা বাড়াতে না চাইলেও রাষ্ট্রপতি ভোটে প্রণবকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন কি না, তাই নিয়ে সংশয় ঘনীভূত হল। |