বাঙালির রাজ্যে বাংলার মন্ত্রী-আমলারা যা করে দেখাতে পারেননি, ভিন্ রাজ্য থেকে এসে তা-ই করে দেখালেন এক বঙ্গসন্তান।
আর তাতেই বোঝা গেল, পর্যটনের প্রসারে পশ্চিমবঙ্গকে কেন কয়েক যোজন পিছনে ঠেলে দিয়েছে হিমাচল। বাঙালির বেড়ানোর নেশা উস্কে দিতে নিজেদের বাঙালি মুখ্যসচিব সুদৃপ্ত রায়কেই কার্যত তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছে হিমাচল প্রদেশ সরকার। শনিবার সেখানকার পর্যটনের জন্য কলকাতায় সওয়াল করতে এসেছিলেন তিনি। দূরকে কাছে টানতে কী করণীয়, পরোক্ষ ভাবে পশ্চিমবঙ্গকেই তা কার্যত হাতেকলমে শিখিয়ে গেল হিমাচল।
সিমলায় এখন উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির নর্দার্ন জোনাল কাউন্সিল মিটিং চলছে। ওই ব্যস্ততার মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধূমল নিজে এক রাতের জন্য হাজির হয়েছিলেন কলকাতায়। সঙ্গে মুখ্যসচিব। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হিমাচলের পর্যটনমন্ত্রী। এ শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে হিমাচলের পর্যটনকে মেলে ধরতে ‘রোড-শো’য়ে সুদৃপ্তবাবুকেই এগিয়ে দেন তিনি। এ রাজ্যের শ’খানেক ভ্রমণ সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে অডিও-ভিস্যুয়াল উপস্থাপনায় প্রধানত বাংলাতেই সবাইকে স্বাগত জানান হিমাচলের মুখ্যসচিব। |
খড়্গের ধার কেমন, হাতেকলমে পরীক্ষা। রবিবার, পর্যটন মেলায়। ছবি: সুমন বল্লভ |
ভিন্ রাজ্যের পর্যটন মেলায় পশ্চিমবঙ্গের ‘আগ্রাসী উপস্থিতি’ আগে দেখা যায়নি। হিমাচলের রোড-শোয়ে উপস্থিত রাজ্যের একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্তা বলছিলেন, “নিজেদের শো-কেস করার পেশাদারিত্বে পশ্চিমবঙ্গ এখনও ঢের পিছিয়ে।” হিমাচলের এই উপস্থাপনার বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই যেমন জনে জনে ফোন করে বা দেখা করে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আর কয়েক বছর আগে হায়দরাবাদে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি রোড-শোয়ে শেষ মুহূর্তে গুটিকয়েক ভ্রমণ সংস্থাকে খবর দিয়ে মুখরক্ষা হয়। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দফতরের জন্য ‘শিক্ষণীয়’ কোন দিক তা হলে তুলে ধরল হিমাচল সরকার? হিমাচলে পর্যটনের প্রসারে এ রাজ্যের ভ্রমণ সংস্থাগুলিকে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী সুদৃপ্তবাবু সিমলা-কুলু-মানালি-ডালহৌসির বাইরে অচেনা হিমাচলকেও আকর্ষক ভঙ্গিতে তুলে ধরলেন। থাকা-খাওয়া, রাস্তাঘাট বা শান্তিপূর্ণ নিরাপদ আবহের ফিরিস্তিও দিলেন। সপরিবার ভ্রমণের আগে যে বিষয়গুলি জানতে যে-কেউ মুখিয়ে থাকেন। আবার মাছে-ভাতে বাঙালির জন্য মুখ্য সচিবের ‘টোপ’: “হিমাচলের ট্রাউট চাখার সুযোগ কখনওই ছাড়বেন না।” উপস্থাপনা শেষে নৈশভোজের আসরেও হিমাচলের কয়েকটি পদ মজুত ছিল। মুদ্রার উল্টো পিঠে কোথায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ? কলকাতায় বেশির ভাগ রাজ্যের পর্যটনের অফিস থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন সংক্রান্ত অফিস শুধু দিল্লি ও চেন্নাইয়ে রয়েছে। পর্যটন সচিব বিক্রম সেন রবিবার বলেন, “আমরাও অন্য বড় শহরগুলোয় অফিস খোলার কথা ভাবছি।” পুজোয় পর্যটক টানার কথা মাথায় রেখে শীঘ্রই ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা পর্যটন-কর্তাদের। কোন কোন রাজ্যে গিয়ে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মহিমা তুলে ধরা সম্ভব, তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে বলে পর্যটন সচিব জানিয়েছেন। |