সঠিক সঞ্চয় প্রকল্প
বাছতে হবে সঠিক সময়ে
লে যেমন মাছ, বিনিয়োগের বাজারেও তেমন প্রকল্প অসংখ্য। সুযোগ বুঝে ধরতে হবে আপনার যেটি প্রয়োজন। একই সঞ্চয় প্রকল্প সকলের জন্য সমান উপযোগী হতে পারে না। উপযুক্ত প্রকল্প বাছতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে। শুধু প্রকল্প বাছলেই হবে না। সঠিক প্রকল্পে প্রবেশ করতে হবে সঠিক সময়ে। তবেই জালে উঠবে সাফল্য। লগ্নিকারীদের কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে আজ আমরা আলোচনা করব কাদের জন্য কোন কোন প্রকল্প বেশি উপযোগী হতে পারে।

১) সাদা চুলের মালিক যাঁরা: শুরু করা যাক আইনের চোখে যাঁরা প্রবীণ, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি, তাঁদের নিয়ে। এই বয়সে বেশির ভাগ মানুষ অবসর নেন। এঁদের ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ কমে যায়। প্রয়োজন হয় সঞ্চিত তহবিল ঠিক মতো খাটিয়ে নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করার। এই শ্রেণির মানুষের মেনু কার্ডে থাকবে সিনিয়র সিটিজেন প্রকল্প, ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্প, দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঙ্ক আমানত, মিউচুয়াল ফান্ডের ঋণপত্র প্রকল্প, ব্যাঙ্ক ও মিউচুয়াল ফান্ডের মাসিক আয় প্রকল্প। ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ কম হলে এড়িয়ে চলা উচিত ইক্যুইটি এবং অবশ্যই বাজারের তুলনায় অত্যধিক বেশি সুদ প্রদানকারী ভুঁইফোঁড় কোম্পানির আমানত। যাঁদের করযোগ্য আয় থাকবে, তাঁদের এক দিকে যেমন কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে লগ্নি করার কথা ভাবতে হবে, অন্য দিকে এমন সব প্রকল্পের সন্ধান করতে হবে যেখান থেকে আয় থাকে করের থাবার বাইরে। সব সময় জোর দিতে হবে সুরক্ষার উপর। কর ও সুদের ব্যাপারে কিছুটা সুবিধা পান এই শ্রেণির নাগরিকেরা।

২) যে জন আছে মাঝখানে: এই শ্রেণিতে রাখা হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক মানুষদের। সময়টা একই সঙ্গে দায়িত্ব পালনের এবং অবসর-পরবর্তী জীবনের সংস্থান করার। এ সময়ে অনেকেরই সঙ্গী হয় ইএমআই। থাকে সন্তানের পড়ার এবং বাবা-মায়ের চিকিৎসার ব্যয়। খুব ‘ব্যালান্স’ করে না চললেই বিপদ। ব্যয় করতে হয় মেপে এবং নিয়মিত সঞ্চয় করতে হয় পরিকল্পনা ছকে নিয়ে। করের দায় অনেকেরই থাকে। জীবনের মাঝামাঝি এসে সঞ্চয় চালিয়ে যাওয়া যায় পিপিএফ অ্যাকাউন্টে। স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত টাকা জমা করা যায় সংস্থাগত প্রভিডেন্ট ফান্ডে। ভাল সুদ পাওয়া গেলে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঙ্ক আমানতও মন্দ নয়। এসআইপি পদ্ধতিতে নিয়মিত জমানো যায় মিউচুয়াল ফান্ডে। ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছে এবং সামর্থ থাকলে তালিকা থেকে ইক্যুইটিই বা বাদ যাবে কেন। বাদ যাবে শুধু অত্যধিক চড়া সুদের হাতছানিযুক্ত কোম্পানি আমানত এবং চিট ফান্ড। যাঁদের সংস্থাগত পেনশনের সুবিধা নেই, তাঁরা কোনও ভাল পেনশন প্রকল্পে যোগদানের কথা ভাবতে পারেন। অবশ্যই যেন বাদ না যায় স্বাস্থ্য বিমা। প্রয়োজন থাকলে লগ্নি করা যেতে পারে সোনাতেও।

৩) প্রথম ১৫ ওভার: যাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৪০, তাঁদের রান তুলতে হবে প্রথম বল থেকেই। কর্মজীবনের শুরুতে তেমন সাংসারিক চাপ অনেকেরই থাকে না। এই সময়ে লম্বা মেয়াদে নিয়মিত সঞ্চয় ও লগ্নি করে গেলে পরে তা বড় সম্পদে পরিণত হয়। তালিকার প্রথমেই থাকবে পিপিএফ। আর থাকবে ইক্যুইটি ফান্ডে এসআইপি এবং ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে অল্প অল্প করে ভাল ইক্যুইটিতে লগ্নি। প্রয়োজন অনুযায়ী লগ্নি করতে হবে কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে। সোনাকেও রাখতে হবে তালিকায়। দীর্ঘ মেয়াদে জীবনবিমা নেওয়ার এটাই বয়স। সামান্য লগ্নিতে পেনশনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করা যায় এই বয়স থেকেই। শপিং মলের আকর্ষণ কিছুটা উপেক্ষা করে ছোটখাটো অঙ্ক কোনও পেনশন ফান্ডে জমা করে গেলে তা প্রয়োজনের সময়ে বড় আকারে ফেরত আসে।

৪) বিদ্যালয় থেকেই সঞ্চয়ের দুনিয়ায় প্রবেশ: আজকাল পঠনপাঠন চলাকালীনই অনেক সময়ে সন্তানের পকেটে মোটা টাকা গুঁজে দেন বাবা-মা। মোবাইলের বিল, ফাস্ট ফুড এবং শপিং মলের ফাঁদ এড়িয়ে এদেরও নিয়মিত সঞ্চয়ের পথে নামানো যায়। সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য খুলে দেওয়া যায় রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট। এটি হতে পারে আর্থিক সাক্ষরতার প্রথম পদক্ষেপ।

৫) যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে: যে-সব গৃহিণী মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ জিতে কিছু বাঁচাতে পারেন, তাঁরাও তিলতিল করে জমাতে পারেন রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে। ছোট থেকে মাঝারি ধরনের শখ মেটাতেও সাহায্য করবে এই সঞ্চয়। সোনার টানেও করতে পারেন সঞ্চয়।

৬) নিজের বোঝা যাঁরা নিজেরাই বয়ে থাকেন: সঞ্চয় করতেই হবে স্বনির্ভর মানুষদের। নিজেদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি, পেনশনের তহবিল গড়ে নিতে হবে নিজেদেরই, রক্তের জোর থাকতে থাকতে। এঁদের একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। খোলা যেতে পারে রেকারিং ডিপোজিট এবং এসআইপি অ্যাকাউন্ট। হঠাৎ কোনও বড় টাকা হাতে এলে তা ব্যাঙ্কে রাখা যেতে পারে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য। যোগদান করতে পারেন কোনও ভাল পেনশন প্রকল্পে।

৭) কর সেবায় সামিল মানুষ: যাঁদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়, পিপিএফ অ্যাকাউন্ট তাঁদের জন্যও বিশেষ আকর্ষণীয়। এঁরা উদ্বৃত্ত টাকা লগ্নি করতে পারেন করমুক্ত বন্ডে এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ফিক্সড ম্যাচিওরিটি পিরিয়ড বা এফএমপি অ্যাকাউন্টে। সম্পত্তি বিক্রি করে যদি কোনও লাভ হয়, এবং যদি ৩ বছরের মধ্যে অন্য কোনও বসতবাটির জন্য লগ্নির পরিকল্পনা না থাকে, তবে কর বাঁচাতে লাভের টাকা ৩ বছর মেয়াদি ক্যাপিটাল গেইন বন্ডে লগ্নি করা যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.