ঝাপসা চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছেন ছেলেবেলার স্কুলের চেনা ছবি। নিমগাছটা তো সেই একই রকম রয়েছে। বাস্কেটবল খেলার খুঁটিটা অবশ্য দেখতে পেলেন না। ৫৫ বছর আগের স্মৃতির সঙ্গে মেলাচ্ছিলেন বদলে যাওয়া স্কুলের ছবি।
শনিবার হঠাৎ নিজের স্কুলে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক গিরিজাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। নলহাটির হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের ৭৩ বছরের এই প্রাক্তণী ঘুরে ঘুরে স্ত্রীকে দেখাচ্ছিলেন তাঁর ছেলেবেলার স্কুল। ক্লাসঘরের বাইরে বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাঁদের ডেকে পাঠান স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়ালি মোল্লা। ঘণ্টা দেড়েক ধরে স্কুলের খোঁজখবর নেওয়ার পরে বৃদ্ধ ব্যাঙ্কের চেকবই বের করে স্কুলের উন্নয়নের জন্য এক লক্ষ টাকা দান করলেন। |
জানালেন, সাঁইথিয়ার সাঙড়া গ্রামে তাঁর আদি বাড়ি। এই স্কুলের ছাত্রাবাসে থেকেই তিনি পড়াশোন করেছেন। ১৯৫৭ সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করার পরে স্কুল ছাড়েন। তারপর কর্মসূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার জন্য আর স্কুলে আসতে পারেননি। অবসরের পর এখন সস্ত্রীক বহরমপুরে গঙ্গার ধারে একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। গিরিজাশঙ্করবাবু বলেন, “স্কুলের ফোন নম্বরও ছিল না। ইচ্ছা থাকলেও বয়সের ভারে এতদিন আসতেও পারিনি। সম্প্রতি আমার জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। বহরমপুর থেকে গাড়িতে নলাটেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিতে বেরিয়েছিলাম। রাস্তা থেকে স্কুলবাড়িটি দেখে আর আবেগ সামলাতে পারলাম না।” তাঁর স্ত্রী নন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সন্তানদের সঙ্গে এখন যোগাযোগ নেই। যা সঞ্চয় রয়েছে, বৃদ্ধাশ্রমে তাতে দু’জনের চলে যাচ্ছে। এই স্কুল নিয়ে ওঁর কাছে অনেক কথা শুনেছি। স্কুলে আসতে চাইতেন। হঠাৎ করে সেই ইচ্ছা পূরণ হওয়ায় আমি খুব খুশি।”
প্রাক্তনীর সাহায্য পেয়ে অভিভূত স্কুল কর্তৃপক্ষও। প্রধান শিক্ষক ওয়ালি মোল্লা বলেন, “গিরিজাশঙ্করবাবুর দান করা এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্কুলের একটি ক্লাসঘরের ছাদের সংস্কার করা হবে। এ দিনের ঘটনা আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” যাওয়ার সময় ফের ঘাড় ঘুরিয়ে স্কুল বাড়ি দেখলেন বৃদ্ধ ছাত্রটি। |