প্রায় ৭ ঘণ্টা ঘেরাও হওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়া ইসলামপুর কলেজের অধ্যক্ষ উতত্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হল। শনিবার রাতের ট্রেনে ইসলামপুর থেকে উতত্থবাবুকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন তাঁর স্ত্রী চন্দনাদেবী। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মহকুমা প্রশাসনও ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন।
ইসলামপুরের মহকুমাশাসক শুভাশিস ঘোষ বলেন, “আমাদের তরফে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছে। সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে।” চন্দনাদেবী জানান, উতত্থবাবু দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন। তাঁর অভিযোগ, “শুক্রবার দুপুর থেকে ওঁকে অফিস ঘরে আটকে লাইট, ফ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৭ ঘণ্টা ওই ভাবে থাকার ফলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
শুক্রবার কলেজে আবেদনকারী সব ছাত্রছাত্রীকে প্রথম বর্ষে ভর্তি করানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে ছাত্র পরিষদ। তার জেরে ঘেরাও করে রাখা হয় অধ্যক্ষকে। দুপুর ২ টো থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখার পরে ছাড়া হয়। বাড়ি ফিরে অধ্যক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে অধ্যক্ষের স্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্র পরিষদের উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি এহেসানুল হক। তিনি বলেন, “ছাত্রদের স্বার্থে এ ধরনের আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি। তবে অধ্যক্ষকে টিফিন ও জল খেতে দেওয়া হয়। লাইট-ফ্যান বন্ধের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
কলেজ সূত্রের খবর, চলতি শিক্ষাবর্ষে ১৭০০ ছাত্রছাত্রী প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ছাত্রছাত্রী এখনও ভর্তি হতে পারেননি। ইসলামপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজলরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক হয়েছে। কলেজে ৩০ শতাংশ নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া ও সময় বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।”
ইসলামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগারমন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী বলেন, “এত ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে না-পারলে মুশকিল হবে। সমস্যা মেটাতে গোয়ালপোখরে কলেজ করার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছি।”
এ দিনও ইসলামপুর কলেজে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার জন্য ভিড় জমান। তবে গোলমালের আশঙ্কায় কলেজ চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অধ্যক্ষ অসুস্থ হওয়ার ঘটনার পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথা ইসলামপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মানিক ব্যাপারি বলেন, “ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের কারণ যুক্তিযুক্ত। তবে আন্দোলন করার আরও অনেক উপায় রয়েছে।” এসএফআই এর ইসলামপুরের লোকাল কমিটির আহ্বায়ক মোহিত অগ্রবালও জানান, অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখার বদলে অন্য ভাবে আন্দোলন করা যেত। |