কেটেছে চোদ্দো বছর
বিশ্বভারতীতে ‘আলাউদ্দিন কেন্দ্র’ চেয়ে হতাশ অন্নপূর্ণা
মাইহার ব্যান্ড থেমে গিয়েছে কবেই। ‘বাবা’ চলে গিয়েছেন।
বাবা আলাউদ্দিন খাঁয়ের নামে বিশ্বভারতীতে সঙ্গীতকেন্দ্র হোক সাধ ছিল মেয়ে অন্নপূর্ণার। বিশ্বভারতী সম্মতও হয়েছিল। তার পরে দশক পেরিয়ে গিয়েছে। সাধ মেটেনি।
“...আমার বাবা এক সময়ে বিশ্বভারতীতে সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের আগে বা পরে তিনি অনেক বারই বিশ্বভারতীতে গিয়ে থেকেছেন। কবিগুরু তাঁর বাজনা শুনতে ভালবাসতেন।” ১৯৯৮ সালে তৎকালীন উপাচার্য সুজিত বসুকে চিঠিতে লিখেছিলেন অন্নপূর্ণা।
শুধু তাঁর ইচ্ছের কথা জানানোই নয়। ওই বছরেরই ৮ জুলাই ‘সিড মানি’ হিসেবে ৫০ হাজার টাকার ব্যাঙ্ক ড্রাফটও (নম্বর ০১৬৯৭৩, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, কলকাতা পরিষেবা শাখা) দেন। “ওই সঙ্গীতকেন্দ্র গড়ার কাজ কী অবস্থায় রয়েছে, এত দিনেও একটা চিঠি দিয়ে আমায় জানাতে পারেনি আমার স্বপ্নের বিশ্বভারতী!” আক্ষেপ পঁচাশি বছরের সঙ্গীতজ্ঞার।
গত শতকের বিশের দশকে যখন মধ্যপ্রদেশের মাইহারে নতুন ঘরানার জন্ম দিচ্ছেন আলাউদ্দিন, সেই সময়েই জন্ম অন্নপূর্ণার। সেখানেই সুরবাহারে হাতেখড়ি। দাদা আলি আকবর, সতীর্থ রবিশঙ্কর, তিমিরবরণদের সঙ্গে বাবার কাছে তালিম নিতে-নিতে বেড়ে ওঠা। পরে রবিশঙ্করের সঙ্গে বিয়ে এবং বিচ্ছেদ। জনতার দরবারে বাজাননি বেশি। কিন্তু সঙ্গীত প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির পুরস্কার থেকে শুরু করে পদ্মভূষণ। ১৯৯৯ সালে মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে বিশ্বভারতীর তরফে দেশিকোত্তম দিয়ে আসেন সুজিতবাবু। কিন্তু আলাউদ্দিনের নামে সঙ্গীতকেন্দ্র হয়নি।
আলাউদ্দিন খাঁ-এর সঙ্গে মেয়ে অন্নপূর্ণা। —ফাইল চিত্র
এখন মুম্বইয়ের ওয়ার্ডেন রোডে আকাশগঙ্গা অ্যাপার্টমেন্টে অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গী তাঁর স্বামী রুশিকুমার পাণ্ডিয়া। তিনি জানান, বিশ্বভারতীকে বারবার চিঠি দিয়ে অন্নপূর্ণা জানতে চেয়েছেন, সঙ্গীতকেন্দ্র খোলার কত দূর কী হল? শেষ চিঠি দিয়েছিলেন ২০০২ সালের ২ মে, সুজিতবাবুকেই। সদুত্তর মেলেনি। রুশিকুমারের কথায়, “কেন্দ্রের কাজ কতটা এগিয়েছে তা জানতে চেয়ে উনি প্রধানমন্ত্রী (পদমর্যাদা বলে বিশ্বভারতীর আচার্য) এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছিলেন। কেউ সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। অনেকে তো তাঁর চিঠির উত্তরই দেননি। হতাশ হয়ে উনি চিঠি লেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন।”
অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনীকার স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রুশিকুমারবাবু আমাকে খোঁজ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু বিশ্বভারতীতে খোঁজ করে ওই টাকার কোনও হদিস পাইনি।” অথচ ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই বিশ্বভারতীর তৎকালীন ডেপুটি ফিনান্স অফিসার চিঠিতে অ্যাকাউন্টস অফিসারকে জানিয়েছিলেন, অন্নপূর্ণা দেবীর পাঠানো ৫০ হাজার টাকার ব্যাঙ্ক ড্রাফট যেন আলাউদ্দিন খাঁয়ের নামাঙ্কিত চেয়ার বা পদ এবং সঙ্গীত কেন্দ্রের জন্য দান হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর দু’দিন পরে, ২৬ জুলাই বিশ্বভারতীর কর্মসমিতি উপাচার্যের প্রস্তাবে সহমত হয়ে আলাউদ্দিনের নামে ওই পদ ও কেন্দ্র খোলার জন্য দান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের শিক্ষক তথা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মোহন সিংহ খাঙ্গুরার মতে, “সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পরে ওই টাকার হদিস মেলেনি।” সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুধু ওই টাকা কেন, অনেকেই সঙ্গীত ভবনে বিভিন্ন খাতে অনেক টাকা দান করেছেন। সেই সব টাকা কোথায় গেল, তা দিয়ে কী কী করার কথা ছিল, দফতরের কর্মীদের তার তালিকা তৈরি করে দিতে বলেছি। সেই তালিকা হাতে পেলে বলতে পারব, কোন খাতের টাকা কোথায় রয়েছে।”
বিশ্বভারতীর অ্যাকাউন্টস অডিট অফিসার প্রশান্ত মেসরাম অবশ্য বলেন, “অন্নপূর্ণা দেবীর দান করা টাকা আমাদের তহবিলেই রয়েছে। গত ১৪ বছরে সুদে বেড়ে প্রায় ৫৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে কেন কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়নি, তা বলতে পারবে সঙ্গীত ভবনই।” উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের আশ্বাস, “আমরা বিষয়টি দেখছি। সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষকে সার্বিক রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি।”
নিরন্ধ্র অন্ধকারে হয়তো এটুকুই এখন আশার আলো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.