লন্ডন অলিম্পিকে কুস্তির ‘ম্যাট’ থেকে স্বর্ণমৃগয়ার স্বপ্ন দেখছেন সতপাল সিংহ।
১৯৮২ দিল্লি এশিয়াডে ফ্রিস্টাইলের সোনাজয়ী, ‘মহাবলী’ সতপালের আখড়াতেই তৈরি ভারতীয় কুস্তিতে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে সফল নাম—সুশীল কুমার সোলাঙ্কি। ৬৬ কিলোগ্রাম বিভাগে প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও গত অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ জয়ীকে লন্ডনে সেরা বাজি ধরলেও, তাঁর পাশে যোগেশ্বর দত্ত এবং উনিশ বছরের তরুণ প্রতিভা অমিত কুমারকে রেখে সোনার হ্যাটট্রিক যেন দেখতে পাচ্ছেন সতপাল।
তিন জনই তাঁর শিষ্য। সুশীল আবার সতপালের জামাইও! তিন শিষ্যের দক্ষতাতেই অগাধ আস্থা তাঁদের গুরুর। আনন্দবাজারকে সতপাল বলছিলেন, “সুশীল-যোগরাজ-অমিতরা আজকাল মঙ্গোলিয়া, জর্জিয়া, ইরান, জাপান, কোরিয়া, জার্মানি, কাজাকিস্তানের মতো দেশের বিশ্বসেরা কুস্তিগীরদের হেলায় হারাচ্ছে। সে জন্য ওরা তিন জনই লন্ডনে সোনার পদকের বড় দাবিদার।” |
এঁদের পাশে অলিম্পিক কুস্তি দলের একমাত্র মহিলা সদস্য গীতা কুমারীকে নিয়েও আশাবাদী প্রাক্তন তারকা। বললেন, “গীতা কিন্তু লন্ডনে সব হিসেবনিকেশ উলটে দিতে পারে!” কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী মেয়ের সেরা অস্ত্র গতি, বলছিলেন সতপাল। “কুস্তির ম্যাটে গীতা চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র। সুশীল বা যোগেশ্বরের মতোই প্রতিদ্বন্দ্বীর মুহূর্তের ভুলকে কাজে লাগিয়ে নিমেষে ঝাঁপিয়ে পড়ে পয়েন্ট কেড়ে নিতে পটু গীতা।” বিদ্যুৎ-গতির এই নড়াচড়ার ক্ষমতাটাই সুশীল-যোগেশ্বর-গীতাদের কুস্তির পুরনো স্টাইল ছেড়ে আধুনিক স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে উন্নতি করতে সাহায্য করছে। সতপালের কথায়, “অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে ওরা। বিশ্বমানের কুস্তিগীরদের সঙ্গে ওদের লড়াই দেখলেই উন্নতিটা বোঝা যায়।” লন্ডনগামী পাঁচ সদস্যের দলে সুশীল, যোগেশ্বর, গীতার পাশে কমনওয়েলথ সোনা রয়েছে পঞ্চম সদস্য নরসিংহ যাদবেরও।
কুস্তির দুনিয়ায় ভারতীদের এই আত্মবিশ্বাসী উত্থান নিয়ে আসল কথাটা বোধহয় বললেন ভারতীয় কুস্তি সংস্থার (ডব্লুএফআই) সচিব রাজ সিংহ। বলছিলেন, “বেজিংয়ে সুশীলের পদক ভারতীয় কুস্তির চেহারাটা যে কতটা পালটে দিয়েছে, ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে কুস্তিতে আমাদের ১৯টা পদকই তার বড় প্রমাণ। আমার মনে হয়, লন্ডনে আমাদের পাঁচ কুস্তিগীরেরই পদক জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।” |
চার বছর আগে বেজিং অলিম্পিকে সুশীলের ব্রোঞ্জ ভারতের লুপ্তপ্রায় খেলাটিকে স্ব-মহিমায় ফিরতে শুধু সাহায্যই করেনি, বক্সিংয়ের মতো কুস্তিও উত্তর ভারত ও মহারাষ্ট্রে আর একবার প্রচণ্ড ভাবে আলোড়ন তুলেছে। দিল্লি সংলগ্ন নজফগড়ের গ্রামীণ এলাকা ও খামপুর শাদিপুর ও হরিয়ানার গ্রামগঞ্জ থেকে উঠে এসেছেন সুশীলের মতো জাঠ কুস্তিগীররা। সুশীল এই এলাকায় মহাতারকা। এলাকার মানুষ যাঁকে এক জন গ্রামপ্রধানের মতোই সম্মান করে। সুশীল বেজিংয়ে পদক পাওয়ার ৫৮ বছর আগে কুস্তিতে ভারতের প্রথম ব্রোঞ্জ পদক আসে কাসাবা দাদাসাহেব যাদবের হাত ধরে ১৯৫২ হেলসিঙ্কি গেমসে।
কুস্তি দল আমেরিকায় অনুশীলন সেরে দেশে ফিরছে রবিবার। অলিম্পিকে কুস্তির ইভেন্ট শুরু হবে পরের দিকে। তাই দেশে ফিরে সুশীলরা আবার চলে যাবেন বেলারুশ, শেষ দফার ট্রেনিংয়ে। সেখান থেকে দল লন্ডনে পৌঁছবে ৮ অগস্ট। সুশীল অবশ্য মাঝে এক দিনের জন্য লন্ডন যাচ্ছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় অলিম্পিক দলের পতাকা বাহক হয়ে। দারা সিংহের মৃত্যুতে মর্মাহত সতপাল বলছিলেন, “আজ আরও বেশি করে মনে পড়ছে, সুশীল বেজিং অলিম্পিকে পদক জেতার পর আমার আখড়ায় এসে উনি ওকে বলে গিয়েছিলেন, “এখানেই থামলে চলবে না। তোমাকে লন্ডন থেকেও পদক আনতে হবে।”
প্রয়াত দারা সিংহের কথা রাখতে পারবেন তো সুশীল?
|
বিশেষজ্ঞের রায় |
“কুস্তিতে সেরা বাজি সুশীল আর যোগেশ্বর। গীতাও হিসেব
উলটে দিলে অবাক হব না। চমকে দিতে পারে অমিতও।”
সতপাল (সুশীলের কোচ) |
|