ডিস্কো থেকে নেট,
জাল পাতে ‘অন্য নেশা’
ত বছরের হিট বলিউডি ছবি ‘দম মারো দম’-এর গানটার দু’লাইন মনে আছে? “কেয়া হ্যায় পসন্দ কহো আপ কি? টোপি হ্যায় পেয়ারে হর নাপ কি...”
অর্থাৎ, যেমন নেশা চাই, এখানে মিলবে ঠিক তেমনই। গোয়ার সমুদ্রসৈকত লাগোয়া কোনও ‘রেভ পার্টি’র কথা হচ্ছে না। বরং গত পাঁচ-ছ’বছর প্রায় ওই ধরনেরই ছোটখাটো ‘রেভ পার্টি’ রমরমিয়ে চলছে কলকাতা ও তার আশপাশে। কোকেন-চরস-হ্যাশ থেকে শুরু করে ‘চিকস্’ (মহিলা) কী নেই সেখানে? গত ৩০ জুন থেকে এ পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ধরা হয়েছে সাত জনকে। তাদের জেরাকরেই ‘রেভ পার্টি’ আয়োজনের পন্থা, অন্দরের গপ্পো ধীরে ধীরে সব কিছুরই খুঁটিনাটি তথ্য পাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের নার্কোটিকস শাখার অফিসারেরা। ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল) মুরলিধর শর্মা শনিবার বলেন, “ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে এই ঘটনায় আর কে কে জড়িত।”
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, মূলত দু’ভাবে আয়োজন করা হয় ‘রেভ পার্টি’র। শহরের বিভিন্ন ডিস্কো-নাইট ক্লাব-হুক্কা বারে নিয়মিত যান যাঁরা, তাঁদের অনেকেই রাত ১২টার পরেও আসর ছাড়েন না।
সেই সূত্রেই এঁদের অনেকের মধ্যে গড়ে ওঠে যোগাযোগ। তার পর কেউ এক দিন সঙ্গী-সঙ্গিনীদের প্রস্তাব দেন নিজের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ‘অন্য রকম নেশা’ করার জন্য। মদ্যপানের ব্যবস্থার সঙ্গেই সেখানে মজুত থাকে কোকেন।
পার্টিতে যেতে-যেতে যাঁরা আসক্ত হয়ে পড়েন, তাঁরাই ক্রমে কোকেন-এর নিয়মিত খদ্দের হয়ে যান। ক্রমশ তাঁরা পছন্দের বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেন। এই সব পার্টিতে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক তরুণী ও এক প্রৌঢ়ের মধ্যে প্রকাশ্যে চূড়ান্ত ঘনিষ্ঠতায় কোনও বাধা নেই, বরং সেটাই রেওয়াজ। পার্টির মধ্যেই অবাধে চলে সঙ্গিনী ‘বদল’। এই সব পার্টিতে অল্পবয়সী মহিলাদের ‘চাহিদা’ই সব থেকে বেশি। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের কাছ থেকে মাদকের দামও নেওয়া হয় না।
কলকাতায় এই ধরনের ‘রেভ পার্টি’র দুই প্রধান উদ্যোক্তা সম্প্রতি ধৃত প্রত্যুষ চৌধুরী ও রাজীব মোহতা। প্রত্যুষের শিল্পজাত রাসায়নিক আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা। রাজীব একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার মালিক। পুলিশ জেনেছে, এই দু’জনের পরিচিত এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটেই শহরের সব থেকে বেশি ‘রেভ পার্টি’ বসেছে। আসর বসেছে শহর লাগোয়া কয়েকটি রিসর্টেও। এক-একটি পার্টিতে মাত্র পাঁচ-ছ’গ্রাম কোকেন ব্যবহার হয়, বাজারে যার দাম অন্তত ৫০ হাজার টাকা।
আরও এক ভাবে আয়োজন হয় পার্টির। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, এসএমএস-এর মাধ্যমে পরিচিত ‘ইচ্ছুক’দের পাঠানো হয় বার্তা। প্রত্যুষ ও রাজীব (পরিচিত মহলে নাম যথাক্রমে পি.সি. এবং রাজু) জেরায় জানিয়েছে, তাদের আগে এই চক্রের যে পাঁচ জন গ্রেফতার হয়েছে, মাদক কেনা হত তাদের কাছ থেকেই। ‘চিকস্’ সরবরাহেরও লোক রয়েছে এই পার্টিতে। উঠতি শিল্পপতি বা সেলিব্রিটি এ পার্টি টেনেছে সমাজের অভিজাত শ্রেণির অনেককেই।
পুলিশ সূত্রের খবর, অনেক সময় বিভিন্ন নাইট ক্লাব-রেস্তোরাঁতেও নজরদারি চালায় মাদক পাচারকারীরা। যেমন, গত ৩০ জুন এন্টালি থেকে গ্রেফতার হওয়া দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবের ড্রামবাদক অ্যাং সেরিং ইউবাথেনিন। ক্লাবের কিছু অতিথির সঙ্গে ভাব জমিয়ে সে বলত, তার কাছে ‘অন্য রকম’ পার্টির খোঁজ আছে। হিমাচলপ্রদেশ থেকে হ্যাশ আমদানি করাই ছিল তার আসল পেশা। একই কাজ করত ধৃত মেলভিন স্মিথ কিংবা জিঞ্জার অ্যান্ড্রু ডগলাস। তারপর ডোনাল্ড উইসলে মেটল্যান্ডের মতো ‘সরবরাহকারী’র হাত ঘুরে সে সব মাল চলে যেত প্রত্যুষ-রাজীবের মতো লোকেদের হাতে।
পুলিশের দাবি, প্রত্যুষ জানিয়েছে, ১৯৯৮-এ শহরেরই একাধিক মদ্যপানের আসরে রাজীবের সঙ্গে তার আলাপ। সে-ই তাকে প্রথম ‘রেভ পার্টি’র কথা বলে। কলকাতা ছাড়াও মুম্বই, গোয়া-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় রয়েছে প্রত্যুষের মাদক সরবরাহের ‘এজেন্ট’।
এমন আরও কী কী আছে ধৃতদের ‘পসন্দ’-তালিকায়? জেরা করে এখন সেটাই সবিস্তার জানতে চায় পুলিশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.