গ্রাম-গঞ্জেও বাজার ধরার লক্ষ্যে এ বার জোড়া প্রযুক্তিতে শান দিচ্ছে আইবিএম। এক দিকে, এ দেশে মোবাইল ব্যবহারের বাড়-বাড়ন্তকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারের বোতাম না-টিপেই ‘নেটে হাঁটা’র প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মন দিয়েছে তারা। অন্য দিকে, জোর দিচ্ছে সব ধরনের ব্যবসার তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ঝক্কি সামলানোর পরিষেবা মসৃণ করার উপর। ‘স্পোকেন ওয়েব’ আর ‘ক্লাউড কম্পিউটিং’ এই দুই প্রযুক্তির কাঁধে চেপেই আগামী দিনে দেশের ছোট শহর এমনকী প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবসার জাল বোনা সম্ভব হবে বলে মার্কিন বহুজাতিকটির দাবি।
আইবিএমের মতে, কম্পিউটারে অক্ষর চিনে ‘টাইপ’ করার ঝঞ্ঝাট এড়াতে পারলে এক ধাক্কায় বিশাল বাজার খুলে যাবে তাদের সামনে। বিশেষত ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে। যেখানে অধিকাংশ মানুষেরই কম্পিউটার কেনার সামর্থ নেই। অনেকে ইংরেজিতে সড়গড় নন। এমনকী মাতৃভাষাতেও অক্ষর পরিচিতি নেই বিপুল সংখ্যক মানুষের। কিন্তু তাঁদের তথ্যের চাহিদা অফুরান। এই সম্ভাবনাময় বাজারকে পাখির চোখ করেই স্পোকেন ওয়েব প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে আইবিএম। ইতিমধ্যেই কয়েকটি জায়গায় মোবাইলের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু পরিষেবায় ওই প্রযুক্তি জুগিয়েছে তারা। আগামী দিনে তা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ (www)-এর সমান্তরাল বিকল্প হয়ে উঠবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
সংস্থার কর্তাদের দাবি, স্পোকেন ওয়েব যদি নেট ব্যবহারের সংজ্ঞা বদলে দেয়, তবে ব্যবসার দুনিয়ায় বিপ্লব নিয়ে হাজির হবে ক্লাউড কম্পিউটিং। এই বিভাগের কান্ট্রি ম্যানেজার বংশীচরণ মুডিয়াম জানাচ্ছেন, “সহজ কথায় ক্লাউড কম্পিউটিং হল ব্যবসার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় জটিলতা কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থার হাতে ছেড়ে দেওয়ার সুবিধা। অনেকটা কাপড় কিনে সেলাই করে জামা তৈরির পরিবর্তে রেডিমেড পোশাক কেনার মতো। এখন কোনও বড় ব্যাঙ্ক কিংবা বহুজাতিক সংস্থা যেমন এই পরিষেবার সুবিধা নিচ্ছে, তেমনই এর হাত ধরেছে ফলের রস বিক্রির মতো অনেক ছোট ব্যবসাও। কেউ তথ্য সংরক্ষণ, সংস্থার নিজস্ব ই-মেল পরিষেবা, সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণের মতো কাজ আমাদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। কেউ আবার ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলছে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম। ফলে এ নিয়ে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে শুধু ব্যবসার মূল কাজে মন দিতে পারছে তারা।” মূলত এই প্রযুক্তির হাত ধরেই তাঁরা ছোট শহরগুলিতে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানান মার্কেটিং লিডার কিরণ রাও-ও। |
ব্যবসা বিস্তারে ক্লাউড কম্পিউটিং যেমন তুরুপের তাস, তেমনই স্পোকেন ওয়েব-কে কেন ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করছে আইবিএম?
বেঙ্গালুরুতে সংস্থার গবেষণা কেন্দ্রের ম্যানেজার জেরোম হোয়াইটের দাবি, ইন্টারনেট নিয়ে পৃথিবী জুড়ে যতই আলোড়ন হোক না-কেন, এক দশকে তা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। বিশেষত ভারতের মতো দেশে। যেখানে কম্পিউটারে নেট ব্যবহারের উপযুক্ত পরিকাঠামো অনেক জায়গাতেই গরহাজির। তার উপর রয়েছে অক্ষর চেনার সমস্যা। আর ঠিক এই জায়গাতেই ইন্টারনেটকে টেক্কা দিয়েছে মোবাইল। বিদ্যুৎ গতিতে বেড়েছে তার ব্যবহারকারীর সংখ্যা। টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-র জানুয়ারিতে ভারতে মোবাইল ব্যবহার করেন এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৭.১০ কোটি। যার পাশে নেহাতই নগণ্য (১১.২০ কোটি) নেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এই কথা মাথায় রেখেই স্পোকেন ওয়েব প্রকল্পে এত জোর দিয়েছে আইবিএম। সংস্থার বিশ্বাস, যোগাযোগের দুনিয়ায় পরবর্তী বিপ্লব আসবে এই প্রযুক্তির হাত ধরেই।
ঠিক কী ভাবে কাজ করবে স্পোকেন ওয়েব?
হোয়াইট জানাচ্ছেন, এখানে শুধু ফোনে কথা বলতে পারলেই কেল্লা ফতে। তা-ও আবার মাতৃভাষায়। কারণ, নেটের দুনিয়ায় যেমন ওয়েবসাইট রয়েছে, স্পোকেন ওয়েবে তেমনই থাকবে ভয়েস-সাইট। প্রত্যেক ওয়েবসাইটেরই নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে (যেমন, www.google.com)। তেমনই এখানে প্রত্যেক ভয়েস-সাইটের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট ফোন নম্বর। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা ভয়েস-সাইট তৈরি করতে চাইলে কথার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য পুরে দিতে পারবেন ওই নম্বরে। উল্টো দিকে, কেউ সেই তথ্য জানতে পারবেন ওই নম্বরে ফোন ঘোরালেই। অনেকটা যে-ভাবে ফোনে কথা বলে এখন গ্যাস বুকিং করি আমরা। কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে না। একটি মোবাইল কিংবা ল্যান্ডলাইন থাকাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের পৃথিবীতে সমস্ত ওয়েবসাইট যেমন একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকে, ঠিক তেমনই যুক্ত থাকবে সব ভয়েস-সাইটও। উঠে আসবে চালু প্রযুক্তির সমান্তরাল বিকল্প হিসেবে।
ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত-সহ কয়েকটি রাজ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়েছে ভয়েস-সাইট। এর মাধ্যমে কোথাও রোগের নাম বলে বা তার বর্ণনা দিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ নিচ্ছেন মানুষ। কোথাও বা এর মাধ্যমে ইংরেজি শিখছে গ্রামের স্কুলের বাচ্চারা। হোয়াইটের কথায়, “এই পরিষেবায় কিছু ত্রুটি রয়েছে এখনও। তবে নেটের ভবিষ্যৎ বাঁধা রয়েছে ভয়েজেন সফটওয়্যার চালিত এই প্রযুক্তির হাতেই।” |