ভরদুপুরের কলেজপাড়া। লাইন করে দাঁড়িয়ে বাস-ট্যাক্সি। তার ফাঁক দিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে জল থইথই রাস্তা পেরোচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
একই অবস্থা আমহার্স্ট স্ট্রিট এবং বাগবাজার এলাকার। বিকেলে দেখা যায়, শিয়ালদহের এপিসি রোডের দু’দিকেই টানা গাড়ির লাইন।
এই ক’টি এলাকাই নয়, বুধবার দিনভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। যার জেরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যানজটে আটকে যায় রাস্তাঘাট। দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বহু অফিসযাত্রী এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াকে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন বেশি বৃষ্টি হয়েছে উত্তর কলকাতায়। দক্ষিণ কলকাতায় হয়েছে নামমাত্র। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব জানান, ঠনঠনিয়া, মানিকতলা বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙায় ৫০-৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উত্তর কলকাতার রাজেন্দ্র দেব রোড, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট-সহ বেশ কিছু এলাকায় জল জমে। পরিস্থিতি দেখতে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, উত্তর কলকাতার যে সব রাস্তায় জল জমেছিল, বিকেল তিনটের মধ্যেই তা নেমে গিয়েছে। |
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, বেশি জল জমেছে আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাংশে। যার ফলে সকাল থেকেই যান-চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে অনেক বইয়ের দোকানেও জল জমে। দুপুরে মহাত্মা গাঁধী রোডে হাওড়ামুখী গাড়ির লাইন কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে প্রায় শিয়ালদহ উড়ালপুলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। হাতিবাগানের বেশ কিছু এলাকা এবং দমদম জংশন স্টেশনের সাবওয়েও জলমগ্ন হয়ে যায়।
সাতসকালে কাজে বেরোনো অনেককেই নানা ঝামেলা সামলিয়ে অফিস পৌঁছতে হয়েছে। যানজটের কারণে শহরতলি থেকে ট্যাক্সিচালকেরা উত্তর এবং মধ্য কলকাতার যাত্রী তুলতে চাননি। বরাহনগর থেকে ধর্মতলায় অফিস যাওয়ার ট্যাক্সি ধরতে আসেন কমল সেনগুপ্ত। কিন্তু হাজার অনুরোধেও ট্যাক্সিচালকেরা যেতে রাজি হননি।
এ দিনের যানজটের কারণ কী?
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “জলে ডোবা রাস্তায় গাড়িঘোড়ার গতি কমে গিয়েছিল। সে কারণে বেশ কিছু এলাকায় যানজট হয়। তবে বিকেলের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।”
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, জল এড়িয়ে চলতে অন্য রাস্তাতেও গাড়ির ভিড় বেড়েছে। কিছু এলাকায় যানজট সামলাতে গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এক ট্রাফিককর্তা জানান, আমহার্স্ট স্ট্রিট ও মহাত্মা গাঁধী রোডে জল জমায় গাড়ি আটকে পড়ে। তাই মহাত্মা গাঁধী রোড থেকে শিয়ালদহমুখী গাড়িগুলিকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিকেলের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় জল নামতে শুরু করে।
এ দিন সেক্টর ফাইভ-সহ সল্টলেকের বেশ কয়েকটি এলাকাও জলমগ্ন হয়ে যায়। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেক্টর ফাইভের কলেজ মোড়ে জল জমে যায়। ওয়েবেল কমপ্লেক্স এবং তার সংলগ্ন এলাকায় জল জমলেও দুপুরের মধ্যে নেমে যায়। জল জমেছিল সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়েও। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ওই এলাকায় মেট্রোর কাজ চলার কারণেই এই অবস্থা।
অন্য দিকে, এ দিন সকালে বাজ পড়ে আগরপাড়ার তেঁতুলতলায় ভিকি সাউ (৩১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, তেঁতুলতলায় ওই যুবকের একটি করাতকল আছে। ভিকি সেখানে যাওয়ার সময়েই বাজ পড়ে। রাস্তাতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। |