ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল থেকে শুরু করে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগে অনার্সের জন্য কলেজগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। ওই সমস্ত অনার্স বিভাগে আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলিও আন্দোলনে উত্তাল। ঠিক ওই সময় অর্থনীতি অনার্সের আসন ফাঁকা পড়ে আছে। মালদহ জেলার বিভিন্ন কলেজে ওই পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন শিক্ষক মহল। তাঁদের আশঙ্কা এ ভাবে চলতে থাকলে অর্থনীতির অনার্স বিভাগ বন্ধ হয়ে যাবে। জেলার যে চারটি কলেজে অর্থনীতিতে অর্নাস পড়ানো হয় প্রতি কলেজে একই ছবি। জানা গিয়েছে, মালদহ কলেজ, মালদহ মহিলা মহাবিদ্যালয়, চাঁচল কলেজ, সাউথ মালদহ কলেজে অর্থনীতি বিভাগে অনার্সের আসন রয়েছে ১৮১টি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ জন ভর্তি হয়েছেন। শুধু তাই নয়। যে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন অন্য বিভাগে চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ওই পরিস্থিতিতে বর্তমানে জেলার চারটি কলেজে অর্থনীতি অনার্স বিভাগে ছাত্রছাত্রীর তুলনায় শিক্ষককের সংখ্যা বেশি। আগামীদিনে ওই কলেজগুলিতে ওই বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রাখা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান মধুমিতা সেনগুপ্ত বলেন, “অর্থনীতি অনার্সে অঙ্ক বাধ্যতামূলক। ওই কারণে ছাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কাউন্সিলের সদস্যদের বলেছিলাম অঙ্ক ছাড়া যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী অর্থনীতি অনার্সে ভর্তি হবে তাঁদের তিন মাস অঙ্কের ব্রিজকোর্স করে বিএ ডিগ্রি দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী অঙ্ক নিয়ে ভর্তি হবে তাঁদের বিএসসি ডিগ্রি দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।” তিনি জানান, ওই নিয়ম চালু হলে অর্থনীতি অনার্সে ছাত্রছাত্রীর সমস্যা হত না। এর আগে উচ্চ মাধ্যামিকে বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে অর্থনীতিকে জুড়ে দিয়ে একটি বিষয় করার প্রস্তাব শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়া হয়। সেটা হলেও অর্থনীতি অনার্স কোর্স রক্ষা করা সম্ভব হবে। মালদহ কলেজে অর্থনীতি বিভাগে আসন সংখ্যা ৮২টি। সেখানে ৩ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হলেও মহিলা মহাবিদ্যালয় ও চাঁচল কলেজে অর্থনীতি অনার্স বিভাগের অবস্থা আরও খারাপ। দুটি কলেজে ওই বিষয়ে এ বছর মাত্র একজন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। অথচ মহিলা মহাবিদ্যালয়ে অর্থনীতি অনার্স বিভাগে আসন সংখ্যা ৩৩ এবং চাঁচল কলেজে ৩০। এ বছর একজন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হলেও গত দু’বছরে ওই বিভাগে একজনও ভর্তি হয়নি। মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা চৈতালি চট্টরাজ বলেন, “গত দু’বছর আমার কলেজে অর্থনীতি অনার্স বিভাগে একজন ছাত্রী ভর্তি হয়নি। এ বার একজন ভর্তি হয়েছে। শুনছি সেও নাকি চলে যাবে।” তিনি মনে করেন ওই সমস্যা সমাধানের জন্য, অর্থনীতি নিয়ে পড়লে ভাল চাকরি মিলতে পারে সেটা ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো দরকার। চাঁচল কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক পঙ্কজ কুণ্ডু বলেন, “এখানকার ছাত্রছাত্রীরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপরে তাকাতে পারছে না। এ ছাড়াও কেরিয়ার কাউন্সেলিং না হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”
|