|
|
|
|
টানটান স্নায়ুর লড়াইয়ে আগে পলক ফেলতে রাজি নয় কোনও পক্ষই |
কে প্রথম কথা বলবেন,‘বল-যুদ্ধ’ প্রণব-মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
স্নায়ুযুদ্ধে কেউ আগে পলক ফেলতে রাজি নন! প্রণব মুখোপাধ্যায় বল ঠেলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোর্টে। মমতা সেই বল ফেরত পাঠাচ্ছেন প্রণববাবুর কোর্টেই! যার নিট ফল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের বল আর গড়াচ্ছে না!
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে নিজের শহর কলকাতায় এসে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের চার শরিক দলের (যারা তাঁকে সমর্থন করছে) বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রণববাবু সোমবার জানিয়ে গিয়েছেন, আগ বাড়িয়ে তিনি তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে যাবেন না। মমতা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হলে তবেই তিনি কথা বলবেন।
রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী প্রণববাবু বিধানসভায় ওই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মহাকরণ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ (ববি) হাকিম পাল্টা বলেছেন, মমতা কেন আগে কিছু বলতে যাবেন? যিনি প্রার্থী, কথা তো তিনিই আগে বলবেন! প্রণববাবুর ‘সৌজন্য ও রুচিবোধ’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দুই মন্ত্রী।
দিনের শেষে দুই শিবিরের যা মনোভাব, তাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবুকে তৃণমূল নেত্রীর সমর্থনের সম্ভাবনা ‘ক্ষীণতর’ হচ্ছে বলা চলে।
বিধানসভায় এসে প্রণববাবু এ দিন সকালে প্রথমে সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, ডিএসপি এবং সমাজবাদী পার্টির বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর বৈঠক করেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে। কংগ্রেসের কয়েক জন সাংসদও সেখানে ছিলেন। তিনি কি তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন? জোড়া বৈঠকের পর প্রশ্নের জবাবে প্রণববাবুর ‘কৌশলী’ জবাব, “আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত, যখন তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত হবেন!” রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁদের অবস্থানের ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রী এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। |
|
স্বাগত। বিধানসভায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার। ছবি: অশোক মজুমদার |
সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই প্রণববাবুর মন্তব্য, “যবে থেকে আমার প্রার্থীপদ ঘোষণা করা হয়েছে, ইউপিএ-র সব শরিকের কাছ থেকেই সমর্থন চেয়েছি। একটি দল বাদে বাকিদের সমর্থন পেয়েছি। যত দূর আমি বুঝি, তাঁরা (তৃণমূল) এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। আশা করি, আমার প্রার্থীপদ বিবেচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলে আমিও সেই মতো পদক্ষেপ করব।”
বর্ষীয়ান রাজনীতিক প্রণববাবু তাঁদের কোর্টেই বল ঠেলেছেন বুঝে মমতা আসরে নামান রাজ্য মন্ত্রিসভায় তাঁর দুই সহকর্মীকে। সুব্রতবাবু বলেন, “যিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরই সকলের কাছে যাওয়ার কথা। এটাই রীতি। কিন্তু কেউ কেউ সিপিএমের কাছে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। উনি তাই সিপিএমের কাছে গিয়েছেন!” কিন্তু প্রণববাবু তো বলেছেন, মমতা কথা বলতে রাজি থাকলে তিনিও প্রস্তুত। যা শুনে সুব্রতবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “তবে কি মমতাকে বলতে হবে, আমি কথা বলতে চাই?” আর ফিরহাদ হাকিমের সংযোজন, “নির্বাচনী প্রচারে বেরোলে ভোট দেবে না জেনেও তো আমরা সিপিএমের লোকের কাছে যাই। রাজনীতিতে এটাই সৌজন্য। যে প্রার্থী, সে ভোট চাইবে!” আরও এক ধাপ এগিয়ে ফিরহাদের মন্তব্য, “প্রণববাবু আজ যা করলেন, তা কলঙ্কিত ঘটনা! আমরা মরে গেলেও সিপিএমের কাছে ভিক্ষা চাইব না, মাথা নত করব না, হাত পাতব না!”
তাঁদের কি এ দিনের বৈঠকে ডাকা উচিত ছিল? সুব্রতবাবু বলেন, “সেটা ওঁদের রুচি, বিবেকের ব্যাপার। তবে কে ডাকল, কে ডাকল না, সে জন্য আমরা লালায়িত নই!” তাঁরা কাকে ভোট দিচ্ছেন? সুব্রতবাবুর জবাব, “আমাদের প্রার্থী ছিলেন কালাম। তিনি দাঁড়াননি। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মমতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি যা বলবেন, তা-ই হবে।” |
আমি ওঁর সঙ্গে
কথা বলতে প্রস্তুত,
যখন তিনি
আমার সঙ্গে কথা
বলতে প্রস্তুত হবেন!
প্রণব মুখোপাধ্যায় |
তবে কি মমতাকে বলতে হবে,
আমি কথা বলতে চাই?
যিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন,
তাঁরই সকলের কাছে যাওয়ার কথা।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় |
|
বিধানসভায় এ দিন বামেদের সঙ্গে প্রণববাবুর বৈঠকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, প্রচারে না-এলেও তাঁদের সমর্থন প্রণববাবু পেতেন। বাম দলগুলির বৈঠকে তেমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাঁকে তাঁরা সমর্থন করছেন, সেই প্রার্থীর জয় যে ‘নিশ্চিত’, সে কথাও বৈঠকে উল্লেখ করেন সূর্যবাবু। পরে তিনি বলেন, “চার বাম দলের বিধায়কদের তিনি (প্রণববাবু) কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আমরাও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।” ফরওয়ার্ড ব্লকের পরেশ অধিকারী, ডিএসপি-র প্রবোধ সিংহেরা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে এবং ‘বঙ্গসন্তানে’র প্রসঙ্গ এনে প্রণববাবুকে সমর্থনের কথা বলেন। যদিও পরে সুব্রতবাবু কটাক্ষ-মিশ্রিত প্রশ্ন তুলেছেন, “সিপিএমের সব ভোট প্রণববাবু পাবেন তো?” |
|
|
|
|
|