অসুস্থ এক মহিলা যাত্রীকে ধাক্কা মেরে কামরার মধ্যেই ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বহরমপুর জিআরপি থানার এক পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই মহিলা অবশ্য বিনা টিকিটেই সফর করছিলেন বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদহগামী ডাউন লালগোলা প্যাসেঞ্জারের মহিলা কামরায়।
ওই ঘটনার জেরে দুর্গা বেদ নামে ওই মহিলার মাথা লোহার আসনের কাঠামোয় আঘাত লাগায় কামরার মধ্যেই তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে ওই মহিলা যাত্রীর মা মিনতি বেদ বহরমপুর জিআরপি থানায় ওই পুলিশ কর্মী ও মহিলা টিটি’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে রেল পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে ওই ঘটনার তদন্তে জিআরপি (কৃষ্ণনগর) থানার ইন্সপেক্টর প্রদীপকুমার দাস বহরমপুরে এসে পৌঁছান। প্রদীপবাবু বলেন, “ওই কামরার দায়িত্বে থাকা রেল পুলিশ ও টিটি’র বিরুদ্ধে বহরমপুর জিআরপি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। |
অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাদেবী ও তাঁর মা মিনতি বেদ-সহ ৫ জন নৈহাটি যাওয়ার জন্য এদিন সকালে পূর্ব রেলের বলরামপুর হল্ট স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়েন। ট্রেনটি তখন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মা-মেয়ে ও দুই সঙ্গী দ্রুত মহিলা কামরায় উঠে পড়েন। মিনতিদেবীর কথায়, “কামরায় উঠতেই মহিলা টিটি আমাদের কাছে টিকিট দেখতে চান। কিন্তু টিকিট কাটতে না পারায় আমরা তা দেখাতে পারিনি। তখন টিটি জরিমানা করার কথা বলেন এবং সাড়ে পাঁচশো টাকা চান। কিন্তু কেন টিকিট কাটতে পারিনি, তা জানিয়ে আমরা পরের স্টেশন সারগাছিতে নেমে যাওয়ার কথাও বলি। কিন্তু টিটি কোনও কথাই শুনতে চাননি।” তিনি বলেন, “আমরা জরিমানার সাড়ে পাঁচশো টাকাও দিয়েছিলাম। কিন্তু রসিদ পেয়েছি ২৬০ টাকার।” সে কথা তিনি রেলপুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
মিনতিদেবীর কথায়, “ওই মহিলা টিটি এর পরেই পুলিশ ডেকে আনেন। ওই পুলিশ কর্মী এসেই হম্বিতম্বি করতে থাকেন। তার প্রতিবাদ করায় ওই রেল পুলিশ আমার মেয়েকে আচমকা ধাক্কা দিয়ে কামরার মধ্যেই ঠেলে ফেলে দেয়। এতে মেয়ের মাথায় আঘাত লাগে এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন সারগাছি স্টেশনে নামিয়ে তাকে নিয়েই ওই জিআরপি থানায় যাই। তাঁরা বহরমপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মতো বহরমপুর জিআরপি থানায় এসে গোটা বিষয়টি জানাই।” এর পরেই বহরমপুর থানার জিআরপি উদ্যোগী হয়ে ওই মহিলা যাত্রীকে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির বন্দোবস্ত করে। হাসপাতালে ওই মহিলার স্যালাইন ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। পরে এদিন দুপুরে ওই পুলিশ কর্মী ও মহিলা টিটি’র বিরুদ্ধে বহরমপুর জিআরপি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। মিনতিদেবী বলেন, “মেয়ে শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় তার গর্ভপাত হয়ে যায়। সে কারণেই তাকে দেখাতে নৈহাটি নিয়ে যাচ্ছিলাম।” রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময়ে ওই মহিলা কামরায় দায়িত্বে জিআরপি থানার কোন পুলিশ কর্মী ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই মহিলা টিটি কাকলি মহন্ত বলেন, “যা জানানোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” |