ধাপায় জঞ্জাল ফেলা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। পুরসভার অন্দরে শোনা যায়, ধাপার জঞ্জালের আড়ালে রয়েছে ‘সোনার খনি’। অভিযোগ, জঞ্জালের লরির ট্রিপ থেকে শুরু করে জঞ্জাল ফেলার হিসেব সর্বস্তরেই রয়েছে বিবিধ ‘হিসেবের’ খেলা। তাই ধাপায় জঞ্জাল ফেলার কাজে স্বচ্ছতা আনতে পুর-উদ্যোগে বসানো হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা। তা বসতেই ‘কমেছে’ জমা হওয়া জঞ্জালের পরিমাণ।
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতিদিনই শহরের জমা জঞ্জাল লরিতে তুলে ফেলা হয় ধাপায়। টন প্রতি জঞ্জাল বহনের জন্য পুরসভা দেয় ২২০ টাকা। সম্প্রতি পুরসভার নজরে এসেছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে জঞ্জালের বদলে শুধু মাটি ভর্তি লরি ঢুকে যাচ্ছে ধাপায়। ওজনও হচ্ছে সেই মাটি। মাসের শেষে পাশ হয়ে যাচ্ছে জঞ্জালের নামে ‘মাটি বহনের’ বিলও।
পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘকাল ধরে এই কাজ করে চলেছেন। কিন্তু নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি মাসেই একটি বড় অঙ্কের টাকা ওই খাতে ‘অপচয়’ হত। সম্প্রতি ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর খবর ছড়াতেই এক লাফে শহরের জঞ্জালের পরিমাণ প্রায় ৮০০ থেকে এক হাজার মেট্রিক টন কমে গিয়েছে। একটি হিসেব দিয়ে তিনি বলেন, “গত জানুয়ারি মাসে দৈনিক প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন জঞ্জাল লরি করে তুলে ধাপায় ফেলা হত। জুন মাসে তা কমে দাঁড়ায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারে। অর্থাৎ, দৈনিক গড়ে এক হাজার মেট্রিক টন করে কমে গিয়েছে।”
পুরসভার অর্থ দফতর সূত্রের খবর, প্রতি দিন দুশো থেকে আড়াইশোটি জঞ্জাল ভর্তি লরি ধাপায় মাল নিয়ে যায়। প্রতিটি গাড়িতে আট থেকে দশ টন জঞ্জাল থাকে। অর্থাৎ, গড়ে এক-একটি লরির ভাড়া বাবদ পুরসভাকে দিতে হচ্ছে প্রায় দু’হাজার টাকা।
যদিও দুর্নীতির কারণে ধাপায় নজরদারি ক্যামেরা বসানোর কথা সরাসরি বলতে চাননি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে সোমবার তিনি বলেন, “পুরসভার কাজে স্বচ্ছতা আনতে এই ক্যামেরা বসানো হল।” পুরসভার কেন্দ্রীয় অফিসে বসেই এ বার দেখা যাবে ধাপায় জঞ্জাল ফেলার ছবি। মেয়রের কথায়, “নানা অভিযোগ এসেছে। কোনটা ঠিক বা বেঠিক, তা নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না। ক্যামেরায় সব ছবিই ধরা পড়বে। সতর্ক থাকবে পুর-প্রশাসনও।” পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার জানান, ধাপায় জঞ্জাল ভর্তি গাড়ি ওজন করার জন্য চারটি ওয়ে ব্রিজ আছে। সেখানে মোট ১১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ধাপায় জঞ্জাল বিভাগের অফিসেও মনিটর করার জন্য টিভি বসানো হয়েছে। |