রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিপাকে ফেলতে আরও তৎপর হলেন বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী পূর্ণ সাংমা।
সোমবার সাংমার পক্ষ থেকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, সত্যপাল জৈন, ভরত্রুহরি মেহতাব নির্বাচন কমিশনে ১৮০ পাতার স্মারকলিপি দিয়ে প্রণববাবুর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান। তাঁদের অভিযোগ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রণববাবুর ইস্তফা বৈধ নয়। ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষরটি প্রণববাবু নিজের বলে দাবি করলেও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাতে অসঙ্গতি রয়েছে। পিছনের তারিখে ইস্তফা পাঠানো হয়েছে। ইস্তফা গ্রহণের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে জুন মাসে আইএসআই-এর যাবতীয় নথি আদানপ্রদানের খতিয়ানও চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা। পাশাপাশি সাংমার অভিযোগ, শুধু আইএসআই নয়, বীরভূম ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির চেয়ারম্যানের মতো দু’টি লাভজনক পদেও রয়েছেন ইউপিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী।
বিজেপি নেতা অনন্ত কুমারের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে আজ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, “প্রণবদার যদি আত্মসম্মান থাকে, তা হলে তিনি তদন্তে সায় দিন। অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে পূর্ণ সাংমাকে নির্বিরোধ প্রার্থী ঘোষণা করুন। নির্বাচন কমিশন যদি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করে, তা হলে আর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু রায় পক্ষে না এলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।”
তবে বিরোধী দলের এই সাঁড়াশি আক্রমণে খুব বিচলিত নন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল বলেছেন, “বিজেপি প্রণববাবুর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে অযথা শক্তিক্ষয় না করে যদি সাংমার হয়েই প্রচার করত, বিষয়টি আরও সম্মানজনক হতো।” মনমোহন-মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, “প্রণববাবু যে অনেক ভাবে স্বাক্ষর করেন, তার প্রমাণ আমরাও পেয়েছি। সংসদের পুরনো কাগজ ঘেঁটে আমি দেখেছি, তিনি নানা ভাবে স্বাক্ষর করেন।”
কিন্তু বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ে বলা হয়েছে, স্বাক্ষরকারী কোনও সই নিজের বলে দাবি করলেই তা যথেষ্ট নয়। সেটি প্রমাণসাপেক্ষ। তা ছাড়া যে ভাবে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা রয়েছে, সেটিও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। আর আইএসআই-এর প্রেসিডেন্ট এম জি কে মেনন যদি প্রণববাবুকে সংস্থার চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করে না থাকেন, তা হলে তাঁর ইস্তফা কী করে তিনি গ্রহণ করেন? পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ তথ্য জানার অধিকারে জানতে চেয়েছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় এখনও সেই পদে আছেন কি না। চেয়ারম্যানের ইস্তফা স্বীকারের অধিকার প্রেসিডেন্টের রয়েছে কি না, সেটাও প্রশ্ন। বিজেপির বক্তব্য, জুন মাসের যাবতীয় নথি আদানপ্রদানের খতিয়ান পেলেই সব প্রকাশ্যে আসবে।
সত্যপাল জৈনের মতে, “প্রণব মুখোপাধ্যায় যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েও যান, তার পরেও আদালতে তিনি ‘অযোগ্য’ প্রমাণ হলে সাংমাকে অবধারিত ভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। ফলে যে কাজ আমরা হাতে নিয়েছি, তার শেষ দেখেই ছাড়ব।” |