কর্নাটকে পালাবদল
মুখ্যমন্ত্রী বদলে ফের প্রকট বিজেপির নেতৃত্ব-সঙ্কট
শেষ পর্যন্ত ইয়েদুরাপ্পার ‘আব্দার’ মেনে কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, তাঁদের মধ্যে কী গভীর অসুখ এখন।
শুধু জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাই নন, বিজেপি নেতাদের অনেকেও বলছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল দলের জাতীয় নেতৃত্ব কতটা দুর্বল! আর কর্নাটকে প্রমাণ হয়ে গেল, যতই দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলুক, রাজ্যে সব থেকে বড় ভোটব্যাঙ্ক লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের রথের রশি এখনও ইয়েদুরাপ্পারই হাতে।
এগারো মাস আগে এই লিঙ্গায়েত নেতাকে যখন দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হয়েছিল, তখন তিনিই উত্তরসূরি হিসেবে সদানন্দ গৌড়ার নাম করেছিলেন। সেই সময় মহারাষ্ট্রে আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারি নিয়ে শাসক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব ছিল বিজেপি এবং পরিস্থিতি বুঝে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিলেন সনিয়া গাঁধী। তার পরে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে লালকৃষ্ণ আডবাণীর যুক্তি ছিল, বিজেপি যে দুর্নীতির প্রশ্নে আপসহীন, সেটা তুলে ধরতে কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী বদল করাই উচিত। দল ও সঙ্ঘের চাপে সরতে বাধ্য হলেও তিনিই কিন্তু সদানন্দ গৌড়াকে মুখ্যমন্ত্রী করার ব্যবস্থা করেন। তখন ইয়েড্ডি ভেবেছিলেন, কোনও লিঙ্গায়েত নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করলে তাঁর কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। গৌড়া ভোক্কালিকা সম্প্রদায়ের নেতা। তাদের ভোট লিঙ্গায়েতদের তুলনায় অনেক কম হলেও লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের ১৬ শতাংশ ভোটের সঙ্গে তা যোগ হলে দলের লাভই হবে। কিন্তু সদানন্দ গৌড়া ভরতের মতো পাদুকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করতে রাজি হলেন না। ফলে ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হল। ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে সিবিআই কার্যকলাপও বাড়তে লাগল। তাঁর ফিরে আসার সম্ভাবনাও ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এল। এই পরিস্থিতিতে বিদ্রোহের হুমকি দিয়ে জাতীয় নেতৃত্বের উপরে চাপ বাড়িয়ে আবার কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী বদল ঘটালেন তিনি।

বি এস ইয়েদুরাপ্পা

সদানন্দ গৌড়া

জগদীশ সেত্তার
কিন্তু সদানন্দ গৌড়াকে সরিয়ে যাঁকে তখতে বসালেন ইয়েদুরাপ্পা, সেই জগদীশ সেত্তার (যিনি লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের লোক) দীর্ঘদিন ধরেই বল্লারি ভ্রাতৃদ্বয় ও অনন্ত কুমারের মতো তাঁর বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। গৌড়া মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময়েও তিনি ইয়েড্ডির বিরোধিতাই করেছিলেন। তা হলে সেত্তারের নাম তুললেন কেন ইয়েড্ডি? তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রেই বলা হচ্ছে, এটা তিনি খুব খুশি মনে করেননি। কিন্তু নিজের সম্প্রদায়ের কাউকে সামনে না রাখলে তাঁর পক্ষে গৌড়াকে সরানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতৃত্বকে রাজি করানোও কিছুটা সহজ হল।
এ বার যে ভাবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে ইয়েদুরাপ্পা চাপের রাজনীতি করছিলেন, তার প্রবল বিরোধী ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী-সুষমা স্বরাজের মতো নেতারা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ইয়েদুরাপ্পার হাতে বেশি সংখ্যক বিধায়ক আছে বলেই তাঁর দাবি মেনে নেওয়াটা ঠিক হবে না। আডবাণীদের যুক্তি ছিল, দলের নীতিগত অবস্থান ঠিক রাখার জন্যই এই দাবি মেনে নেওয়া উচিত নয়। তার থেকে ভোটে যাওয়া ঢের ভাল। কিন্তু দেখা গেল, আডবাণীর যুক্তি শেষ পর্যন্ত টিকল না।
এখন প্রশ্ন হল, তা হলে নিতিন গডকড়ী ইয়েদুরাপ্পাকে সমর্থন করলেন কেন? বিজেপি সূত্র বলছে, আডবাণী চাইলেও যে তাঁর ‘ভেটো পাওয়ার’ নেই বা তাঁর কথাই শেষ কথা নয়, এই ভাবে সেটাই প্রমাণ করতে চাইলেন নিতিন গডকড়ীরা। বস্তুত, সুষমা ছাড়া এই প্রশ্নে আডবাণীর পাশে কেউই থাকলেন না। অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহরাও মনে করছেন, আপাতত ইয়েদুরাপ্পার দাবি মেনে নেওয়াই ভাল। কারণ, এই বদলের ফলে আর এক জন লিঙ্গায়েত নেতাই তখতে বসছেন, যাঁর মধ্যে ইয়েদুরাপ্পার প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। কর্নাটক জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র লিঙ্গায়েত মঠের সমর্থন এখনও পেয়ে থাকেন ইয়েদুরাপ্পা। নতুন মুখ্যমন্ত্রী সেত্তারকে সামনে রেখে এর পর সেই সমর্থন নিজেদের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বিজেপি নেতৃত্ব। ইয়েড্ডির বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির তদন্ত চলছে, তারও দ্রুত ফয়সালা হবে বলে মনে করেন না তাঁরা। অর্থাৎ, চাপটা বজায় থাকবেই ইয়েড্ডির উপরে। সব ঠিকঠাক চললে ১১ মাস পরে রাজ্যে যে বিধানসভা ভোট, তার আগে মঠের সমর্থন আদায় করে ইয়েদুরাপ্পাকে পুরোপুরি নিঃসঙ্গ এবং কোণঠাসা করা সম্ভব হবে। আবার লিঙ্গায়েত ভোটব্যাঙ্ককে হাতে রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকার জোর চেষ্টাও করা যাবে।
কিন্তু জাতীয় স্তরে সকলেই বলছেন, কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী বদলে আরও এক বার প্রমাণ হল, রাজ্য নেতাদের উপরে কর্তৃত্বের হিম্মতটাও চলে গিয়েছে দলের জাতীয় নেতৃত্বের। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বারবার যে নেতৃত্বের সঙ্কট বড় হয়ে উঠছে বিজেপিতে, এই ঘটনা তাকেই ফের সামনে নিয়ে এল। দেখিয়ে দিল, কেন্দ্রীয় স্তরে অন্তর্কলহ এবং সিদ্ধান্তহীনতা এতটাই প্রকট যে রাজ্যের এক জন গদিচ্যুত নেতাও নাস্তানাবুদ করে ছাড়তে পারেন গডকড়ী-আডবাণীদের। যা শেষ হয় তাঁদের নতিস্বীকারেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.