শান্তিনিকেতনে ছাত্রী ‘নির্যাতন’
ওয়ার্ডেন সাসপেন্ড, কোর্ট ক্ষুব্ধ পুলিশের ভূমিকায়
পাঠভবনের ছাত্রী ‘নির্যাতন’-এর ঘটনায় দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অভিযুক্ত হস্টেল ওয়ার্ডেনকে সাসপেন্ড করলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে ওই ‘সাসপেনশন’-এর কথা জানান এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত।
পাঠভবনের ‘করবী’ ছাত্রীনিবাসের পঞ্চম শ্রেণির আবাসিক এক ছাত্রী শনিবার রাতে বিছানা ‘ভিজিয়ে’ ফেলে। সেই ‘অপরাধে’ তার নিজেরই প্রস্রাব চাটানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উমা পোদ্দার নামে ওই ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় সোমবার উদ্বেগ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ও। প্রকৃত ঘটনা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে দ্রুত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে তারা। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারিও এ দিন বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। আশা করছি, দ্রুত তদন্ত হবে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।”
এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে কেন ‘লঘু ধারা’য় মামলা করা হয়েছে, সরকারি আইনজীবীর কাছে তা এ দিন কার্যত ‘ভর্ৎসনা’র সুরে জানতে চান বোলপুরের এসিজেএম পীযূষ ঘোষ। উমাদেবীর বিরুদ্ধে ৩৪১ (অন্যায় বাধাদান। এ ক্ষেত্রে ওই ছাত্রীকে তার বাড়ি ফিরতে বা স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা) এবং ২৬৯ ও ২৭০ ধারায় (সংক্রমণের জেরে জীবনহানি হতে পারে, এমন অবহেলাজনিত বা ইচ্ছাকৃত আচরণ) মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বিচারক জানতে চান, কেন ‘প্রিভেনশন অফ জুভেনাইল জাস্টিস, কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট’-এর আওতায় অভিযোগ আনা হল না?
বীরভূমের এসপি হৃষিকেশ মিনা বলেন, “বিচারক আমাদের দোষ ধরিয়ে দিয়েছেন। অভিযুক্ত উমাদেবীর বিরুদ্ধে ওই নির্দিষ্ট ধারাটি যুক্ত করার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেছি।” বিশ্বভারতী বলেই কি পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ করছে না? এসপি-র দাবি, “বিশ্বভারতী বলে মামলা লঘু করার প্রশ্নই নেই!”
বোলপুর আদালত চত্বরে অভিযুক্ত ওয়ার্ডেন উমা পোদ্দার। সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
সোমবার সকালেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগের (সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে মেয়েদের হস্টেলে বিশৃঙ্খলা করা) ভিত্তিতে ওই ছাত্রীর বাবা-মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আবার তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে ধরা হয় হস্টেল ওয়ার্ডেন উমা পোদ্দারকেও। বিচারক ছাত্রীর বাবা-মায়ের নিঃশর্ত জামিন মঞ্জুর করেন। ২০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয় উমাদেবীকে। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “২৩ জুলাই পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন এসিজেএম। অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের বেতন থেকেই ওই ছাত্রীর চিকিৎসার খরচ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।” উপাচার্য পরে জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডেন সামান্যই বেতন পান। ফলে ছাত্রীটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষই বহন করবেন।
অভিযোগের পরেই কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছেন। এ দিন বিশ্বভারতীর সব ভবনের অধ্যক্ষ, কর্মসচিব, কর্মিসভা, অধ্যাপকসভা ও অন্য আধিকারিকদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। তিনি দাবি করেন, “কমিটি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে, উমাদেবী চাদরে লাগা প্রস্রাবের সঙ্গে নুন মাখিয়ে ওই ছাত্রীকে চাটার নির্দেশ দেন। তবে ওই ছাত্রী তা করেনি। তাকে ভয় দেখাতেই এমন করতে বলা হয়েছিল বলে কমিটি জেনেছে।”
ওই ছাত্রী অবশ্য এ দিনও বলেছে, “আমাকে ওয়ার্ডেন ওই বিছানা চাটতে বাধ্য করেছিলেন।” কিন্তু বিছানা ভেজানোর প্রবণতা ঠেকাতে এ ভাবে ভয় দেখানো কি ঠিক? উপাচার্যের মন্তব্য, “এই ঘটনা কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়। কর্মসচিবের নির্দেশে উমা পোদ্দারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
প্রকৃত অভিযোগ আড়াল করতেই বিশ্বভারতী ওই ছাত্রীর অভিভাবকদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও বিশ্বভারতীর কর্মসচিব মণিমুকুট মিত্র দাবি করেন, “আমরা নির্দিষ্ট ভাবে কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করিনি। ‘জিডি’ করেছি মাত্র।” যদিও এসপি-র দাবি, “বিশ্বভারতীর এফআইআরের ভিত্তিতেই ছাত্রীর বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।”
এ দিনই জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন (এনসিপিসিআর) বিশ্বভারতীকে শো-কজ করেছে। দশ দিনের মধ্যে রিপোর্টও চেয়েছে তারা। কমিশনের চেয়ারপার্সন শান্তা সিংহ বলেন, “রাতে শিশুদের বিছানা ভিজিয়ে ফেলা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে দ্রুত ও কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছি।” আবাসিক শিশুদের সামলানোর জন্য ওই ওয়ার্ডেনের যথাযথ প্রশিক্ষণ ছিল কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কমিশন।
ঘটনা হল, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে সুশান্ত দত্তগুপ্তও বিশ্বভারতীর হস্টেল ওয়ার্ডেনদের জন্য ভবিষ্যতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। যে সিদ্ধান্ত কার্যত কমিশনের আশঙ্কাকেই প্রমাণ করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.