তালিবানের ‘কীর্তি’
বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, গুলি করে ‘শাস্তি’ মহিলাকে
ছাই রঙা বোরখায় সারা দেহ ঢাকা। পিছন দিকে ফিরে থাকায় মুখটা দেখা যাচ্ছে না। আর তাঁকে ঘিরে রয়েছে শ’দেড়েক লোক। হঠাৎই একটা দাড়িওয়ালা লোক এগিয়ে এল। বিড়বিড় করে কিছু বলতে বলতে হাতের একে-৪৭ থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে লাগল মেয়েটির দিকে। মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লেন মেয়েটি। আর সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ল ভিড় করা লোকগুলো। চিৎকার করে উঠল, “ইসলামের জয় হোক। মুজাহিদিন জিন্দাবাদ।”
না। অপরাধ জগৎ সংক্রান্ত ফিল্মের কোনও দৃশ্য নয়। তিন মিনিটের এই ভিডিওটির প্রতিটি দৃশ্যই অত্যন্ত বাস্তব। সৌজন্যে তালিবান। ঘটনাস্থল আফগানিস্তানের পরওয়ান প্রদেশের কিমচক গ্রাম। আর মেয়েটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাই ‘শাস্তি’ দিতে এই ব্যবস্থা। গত কাল তালিবানের তরফে ভিডিওটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদের বন্যা। বিভিন্ন নারী অধিকার রক্ষা সমিতির তরফে প্রতিবাদ-মিছিল। হামিদ কারজাই সরকার ও ন্যাটোর তরফে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। ন্যাটোর কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকেও আফগানিস্তানের মেয়েদের নিরাপত্তার এই অবস্থা কেন? এর পর ২০১৪ সালে ন্যাটো দেশ ছেড়ে চলে গেলে কী হবে?
তালিবানের প্রকাশ করা সেই ভিডিও। ছবি: রয়টার্স।
পরওয়ান প্রদেশের গভর্নর বসির সালাঙ্গি জঙ্গিদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। ন্যাটোর তরফেও অভিযুক্তদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। গভর্নরের অফিসের তরফে রোশনা খালিদ জানান, নিহত মেয়েটির নাম নজিবা। বয়স ২২ বছর। স্থানীয় এক তালিবান কম্যান্ডারকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু আর এক কম্যান্ডার মেয়েটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ায় দলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নজিবার বিরুদ্ধে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়। এর পরেই একটি বিচার সভা ডাকা হয়। সেখানে নজিবাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অভিযোগ, নজিবার বক্তব্য শোনার কোনও চেষ্টাও করেনি তালিবান নেতারা। মাথা লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি করে ‘শাস্তি’ দেওয়া হয় নজিবাকে।
গত কালই টোকিওতে আয়োজিত আফগানিস্তান সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, কোনও দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা (মূলত মেয়েরা) যদি সমাজের সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে তবে সে দেশের কখনও উন্নতি হতে পারে না। তালিবান জমানায় মেয়েদের পড়াশোনা করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০০১ -এ তালিবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও এখনও শোনা যায় মেয়েদের স্কুলের পানীয় জলে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনা। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যতই এই ঘটনাটিকে বর্বরোচিত, ইসলাম-বিরোধী কাজ বলে ব্যাখ্যা করুন, আসল কথা হল কারজাইকে আমেরিকার হাতের পুতুল বলে মনে করেন অনেক আফগানই। আর কারজাই-তালিবান-ন্যাটোর জটিল আবর্তে আফগান মহিলারা যে সেই তালিবান জমানাতেই পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.