|
|
|
|
‘অগ্নিপরীক্ষা’ বলছেন পুরপ্রধান |
আজ আস্থা-ভোট বাঁকুড়া পুরসভায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
তাঁর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আজ, সোমবার আস্থা-ভোট ডাকলেন বাঁকুড়ার তৃণমূল পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। যে ভোটকে তাঁর ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হিসাবেই দেখছেন পুরপ্রধান। এই অনাস্থা এনেছেন খোদ উপপুরপ্রধান অলকা সেনমজুমদার-সহ তৃণমূলের ছয় এবং কংগ্রেসের চারমোট ১০ জন কাউন্সিলর।
শনিবার পুরপ্রধান কাউন্সিলরদের ও বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, সোমবার আস্থা-ভোট হচ্ছে। মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “ভোট শান্তিপূর্ণ করতে পুরভবনের সামনে পুলিশ থাকবে। কাউন্সিলর ও পুর-কর্মচারী ছাড়া বাইরের লোকেদের ওই সময় পুরভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না।” তবে, গোপন ব্যালটে না কি প্রকাশ্যে হাত তুলেকী ভাবে হবে এই আস্থা-ভোট, তা ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান। শম্পাদেবী বলেন, “ভোটের আগে সংখ্যা গরিষ্ঠ কাউন্সিলররা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই হবে ভোট।”
গত ২৩ জুন পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ‘একনায়কতন্ত্র’ চালানোর অভিযোগ তুলে অনাস্থা আনেন তৃণমূলের ৬ এবং কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলর। ২৩ আসনের বাঁকুড়া পুরসভায় তৃণমূলের এক কাউন্সিলর প্রয়াত হওয়ার পরে এখন ওই দলের কাউন্সিলর রয়েছেন ১১ জন। কংগ্রেসের ৫, সিপিএমের ৩, সিপিআইয়ের এক এবং দু’জন নির্দল কাউন্সিলর রয়েছেন।
উপ-পুরপ্রধানের অভিযোগ, আস্থা ভোটে জিততে সিপিএম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শম্পাদেবী তাঁকে সমর্থন করার অনুরোধ করছেন। অলকাদেবী বলেন, “যে সিপিএমের অরাজকতার বিরুদ্ধে আমাদের দলের লড়াই, পুরপ্রধান সেই দলের কাউন্সিলরদের নিয়েই পুরসভা চালাচ্ছেন। তিনি দলের কাছে আমাকে কংগ্রেসের ‘চামচা’ বলে দেখাতে চাইছেন। কিন্তু নিজে সিপিএম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন।”
এই অভিযোগ মানতে চাননি বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী নেত্রী, সিপিএমের শিউলি মিদ্যা। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দলের কাউন্সিলরদের কারও বাড়িতে গিয়ে পুরপ্রধান ভোট চেয়েছেন বলে শুনিনি। এ নিয়ে শম্পা আমার সঙ্গে কখনও কথাও বলেননি।” শিউলিদেবীর অভিযোগ, “অনাস্থা আনার পর থেকেই পুরসভায় পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান নিয়মিত আসছেন না। ফলে পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এই অচলাবস্থা কাটুক।”
আর শম্পাদেবীর মন্তব্য, “এটা আমার অগ্নিপরীক্ষা। কোনও কুৎসার জবাব দিতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, সত্য চাপা থাকে না। এই ভোটে আমার হার বা জিত যাই হোক, তা বড় কথা নয়।” জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রথম থেকেই আস্থা ভোট এড়ানোর চেষ্টা করছেন। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ রবিবার রাতেও বলেছেন, “দল অনাস্থার বিরুদ্ধে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি অনাস্থা আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাব। যাঁরা অনাস্থা এনেছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
কিন্তু তাতে কি আদৌ চিঁড়ে ভিজছে? এক ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলরের সাফ কথা, “আমাদের মনোবল অটুট। আশা করি, আস্থা-ভোটে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।” দল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, শনিবার রাতে বাঁকুড়া শহরের একটি কালীমন্দিরে গিয়ে অনাস্থার পক্ষে ভোট দেওয়ার ‘শপথ’-ও নিয়েছেন অনাস্থায় সই করা তৃণমূলের পাঁচ (এক জন কাজে কলকাতায় ছিলেন) ও কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর।
আস্থা ভোটে তাঁদের কী ভূমিকা হবে, রবিবার রাত পর্যন্ত খোলসা করেননি জেলা বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র জানান, সোমবার সকালে বৈঠকের পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুরসভার ৫ কংগ্রেস কাউন্সিলরের মধ্যে একমাত্র যিনি অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেননি, সেই লক্ষ্মী বিশ্বাসের দাবি, “আস্থা ভোট নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিলাম। আমাকে কেউ কিছু জানাননি।” সে ক্ষেত্রে সোমবার তাঁর অবস্থান কী হবে, তা অবশ্য লক্ষ্মীবাবু ভেঙে বলেননি। যদিও জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলের চার কাউন্সিলর আগেই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন। বাকি এক কাউন্সিলরও অনাস্থার পক্ষেই ভোট দেবেন বলে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” |
|
|
|
|
|