আর পাঁচটা অধ্যাপকের মতো কলেজে পড়ানোর পাশপাশি টিউশন করতে পারতেন। পারতেন নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা আর পাঁচজনের থেকে আরও আলাদ করতে। কিন্তু চিরাচরিত সেই পথ আঁকড়ে থাকতে চাননি। পরিবর্তে নিজেকে একজন বৃক্ষপ্রেমিক আর পরিবেশ আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। সেই কাজে তিনি সফল। গোটা বাঁকুড়া জেলায় সরকারের প্রচেষ্টা আর নিজের উদ্যমে ৬২ হাজার গাছ লাগিয়েছেন অশোক নন্দী। ৬০ বছর বয়সেও যে প্রেম অটুট। এখনও বর্ষায় নিজের জেলায় বনমহোৎসব করেন। বৃক্ষরোপণ করেন দল বেঁধে।পরিবেশ আন্দোলনকে তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘অরণ্যের গান’ রচনা করেন। তবে একই সঙ্গে তিনি লেখকও। আপাতত তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত। সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থটি ‘উপন্যাসে রামায়ণ’। অন্য দুটি ‘উপন্যাসে গীতা’ এবং ‘রাধা নেই কৃষ্ণ নেই’।
কিন্তু রাধাকৃষ্ণ বা রামায়ণ কেন? সমাজজীবনের সামাজিক সমস্যা কি আপনার আগ্রহের বিষয় নয়? নাকি মানবসমাজের বর্তমানে কোনও সমস্যাই নেই। প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চুপ বাংলা ভাষা-সাহিত্যের অধ্যাপক। একটু পরে ভেসে এল উত্তর, “বর্তমান এবং সামাজিক সমস্যাকেই তো এনেছি গ্রন্থে। যদিও নির্যাস তো মহাকাব্যই। বরং দেখবেন ‘রাধা নেই কৃষ্ণ নেই’ উপন্যাসের কাহিনীসূত্র অবশ্যই রাধা-কৃষ্ণ। এই উপন্যাসের শুরু একটি হাট, মথুরাপুর গ্রামের হাট নিয়ে।” অশোকের জন্ম ১৯৫১ সালে। মামার বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাবাটি গ্রামে। পিতৃভূমি বাঁকুড়ার মজুরডাঙায়।
এই জেলার সঙ্গে তাঁর ঘরকন্না দীর্ঘদিনের। তাই বাঁকুড়া জেলার কথ্য ভাষাকে বসিয়েছেন ‘রাধা নেই কৃষ্ণ নেই’ উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের মুখে। মাধব এবং কুন্তী, দুটি অল্প বয়সের কিশোর-কিশোরীর (রাধা-কৃষ্ণ সেজে) গান গেয়ে হাটে মাধুকরী করা। অবশ্য আজকে এই দৃশ্য গ্রামে গ্রামে খুব কম হলেও বিরল নয়। মাধব-কুন্তীর বৃন্দাবনে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার পরে, পরস্পরকে খুঁজে পাওয়া এবং গ্রামের পথে ফিরে আসা। যথারীতি গ্রাম বদলের সঙ্কেতে বেদনাময় কাহিনীর সমাপ্তি। রামায়ণে অবশ্য মহাভারতের মতন লেখককে অসংখ্য চরিত্র এবং ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে রামায়ণকে উপন্যাসে রূপ দেওয়ার কাজটিও সহজ নয়। কোথাও বা স্বাধীনতা নিয়েছেন লেখক। তবুও এই পরিশ্রম ব্যতিক্রমী। লেখার পাশাপাশি চলে পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে গান রচনা। পরিবেশ আন্দোলনকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে চান অধ্যাপক। |