|
|
|
|
বর্ষার মরসুমে পেঁয়াজ চাষে উদ্যোগী দফতর |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • বলাগড় |
‘অসময়ে’ (গরমে) উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন এ রাজ্যের চাষিরা। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে বর্ষায় পেঁয়াজ চাষ করায় উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য উদ্যানপালন দফতর। অসময়ের বিভিন্ন চাষ আগামী দিনে ‘অগ্নিমূল্য’ সব্জির বাজারে রাশ টানবে বলে দফতরের কর্তাদের আশা। রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “আমরা প্রযুক্তি ও বুদ্ধি দিচ্ছি। চাষিরা চাষ করবে। এতদিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি।”
ইতিমধ্যেই নাসিক থেকে সময়ের উপযোগী উন্নত মানের পেঁয়াজ-বীজ আনিয়ে চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিলি শুরু করেছে তারা। হুগলির বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে বড় পর্দায় ছবি দেখিয়ে (প্রজেকশন) চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বলাগড়ের বাকসাগড়ে এমনই একটি শিবিরে অন্তত ১০০ চাষির মধ্যে বীজ এবং জৈব ছত্রাকনাশক বিলি করা হল।
উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মূলত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে পিঁয়াজ চাষ শুরু হয়। উন্নত প্রযুক্তিতে বর্ষার মরসুমেই তা শুরু করা হচ্ছে। তবে শুধু উন্নত মান এবং প্রযুক্তিই নয়, আঁটঘাঁট বেঁধে এই চাষ করাতে তৈরি করা হয়েছে চাষিদের স্বনির্ভর দল। নির্দিষ্ট নামের এক একটি দলে ১০-২০ জন চাষি থাকছেন। দলগুলিকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে সরকারি অনুদানের টাকা সরাসরি তাতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে বিঘা-প্রতি ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছে।
উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা শেষমেশ বুঝেছেন, শুধু উন্নত ফসল ফলিয়েই হবে না, বাজার ধরতে হবে। (আলুর বেশি ফলনে চাষিদের দূরবস্থার কথা মাথায় রেখেই এই ভাবনা।) এ জন্য দফতরের কর্তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রফতানিকারক বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই চাষে যুক্ত কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি চাষিদের ওই সমস্ত সংস্থার যোগাযোগেরও ক্ষেত্রও প্রস্তুত করছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবারের শিবিরে ছিলেন একতারপুর পঞ্চায়েতের বেলেশ্বর গ্রামের চাষি সুব্রত কর্মকার। ওই যুবকের কথায়, “কিছু দিন ধরেই দফতরের অফিসারেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ওঁদের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই ২৩টি দল তৈরি করেছি আমরা। বীজ দেওয়ার মাস্টার রোলও আজ তৈরি হয়ে গেল। এ বার দ্রুত চাষ শুরু করে দেব।” উদ্যানপালন দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র বলাগড় ব্লকেই শ’চারেক চাষি এই চাষে নেমেছেন। জেলায় এই সংখ্যা ৭৮০। রাজ্য উদ্যানপালন দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যের ৭টি জেলায় প্রথমিক ভাবে এই কাজ শুরু হয়েছে। বিপণনের সুবিধার জন্য কলকাতার কাছের সাতটি জেলাকে (হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং মুর্শিদাবাদ) বেছে নেওয়া হয়েছে।
হুগলি উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা দীপককুমার ঘোষ বলেন, “চাষিদের তরফে যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমরা রীতিমতো উৎসাহী। আমাদের দফতর বলাগড় থেকে দু’টি স্বনির্ভর দলের ৪১ জন চাষিকে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাঁরা হাতেকলমে পিঁয়াজের চাষ শিখে এসেছেন।” সুব্রতবাবু নিজেও চলগাঁওতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “ওরা যদি পারে, আমরাও পারব।”
দীপকবাবু বলেন, “এই রাজ্য মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ খেয়ে বেঁচে আছে। এখানেও কিন্তু সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজ উৎপন্ন হচ্ছে। চাষের পরিমাণ বেশি হলে অত পেঁয়াজ ভিন্ রাজ্য থেকে আনতে হবে না। দামও কমবে।” দফতরের অন্য দুই অফিসার পার্থপ্রতিম পাল এবং অনিরুদ্ধ দত্ত বলেন, “বলাগড়ে পেঁয়াজ তৈরি হয়। এখানকার সিজাকামালপুরের গড়াইলে উন্নত পেঁয়াজ হয়। ফলে চাষিদের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তাই এই এলাকাকে বাছা হয়েছে। এখানকার আবহাওয়াও অসময়ে পেঁয়াজ চাষের পক্ষে সহায়ক।” তবে শুধু পেঁয়াজই নয়, উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা চাইছেন, অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও অসময়ে চাষে জোর দিতে। কেননা, তা হলে চাষিরা বেশি দাম পাবেন বলে তাঁদের আশা। গরমে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি ফলিয়ে চাষিদের সাফল্য তাঁদের উৎসাহী করেছে। এ বার তাঁরা চাইছেন, আগামী শীতে ঢেঁড়স, পটল-সহ গরমের নানা সব্জি চাষ করাতে। |
|
|
|
|
|