|
|
|
|
হাত-পা বাঁধা প্রৌঢ় আরামবাগের রাস্তায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা। পা ঘষে ঘষে কোনও রকমে হেঁটে এগিয়ে চলেছেন। সামনে যাকেই দেখছেন হয় খাবার চাইছেন, নয়তো শিকল খুলে দিতে বলছেন। কিন্তু সাধারণ পথ চলতি মানুষ থেকে সরকারি আধিকারিক বা পুলিশ কেউই তাঁর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। শুক্রবার সকাল থেকে সারাদিন এমন দৃশ্য দেখল আমারবাগ শহর। যদিও ওই ‘অপ্রকৃতিস্থ’ প্রৌঢ়ের সাহায্যে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা গেল না। পরে সন্ধ্যার দিকে নিজেই বাড়ি চলে যান তিনি।
দুপুরে আরামবাগ থানার কাছে ঘুরছিলেন আরামবাগের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুরের বাসিন্দা শীতলচন্দ্র মান্না। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তা দেখতে পেয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা পুলিশে খবর দিলেও পুলিশকে কোনও উদ্যোগ নিতেই দেখা যায়নি।
কিন্তু এ ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন? |
|
ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস। |
শীতলবাবুর অভিযোগ, “ছেলে-বৌ আমার হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছিল। আমার দোষ আমি নিজের মনে কথা বলি। মন্দিরের চাতালে মাথা খুঁড়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করি। লোকের কাছে টাকা-পয়সা চাই। তাই ওরা আমাকে এ ভাবে বেঁধে দিয়েছিল।” তাঁর দাবি, “দুই ছেলে মারধর করে। ভাল করে খেতে দেয় না। কাল থেকে কিছু খেতে দেয়নি বলে পালিয়ে এসেছি।” ঘটনার কথা শুনে মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীর মন্তব্য, “কাউকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অন্যায় কাজ। আমি পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলছি।” যদিও পুলিশকে কিছু করে ওঠার আগে সন্ধের দিকে নিজেই বাড়ি ফিরে যান ওই প্রৌঢ়।
স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ী চণ্ডী মণ্ডলের পরিচয় আছে শীতল মান্নার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, “কয়েক মাস আগেও শীতল আমাকে নিয়মিত মাছ দিত। মাথায় সামান্য গোলমাল নিয়েও সৎ ভাবেই সব কাজ করত। ওকে মুটেগিরি, ভ্যান চালানোর মতো কাজও করতে দেখেছি।” তাঁর বিশ্বাস, সঠিক চিকিৎসা করলে সেরে উঠবেন শীতল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুঃস্থ পরিবারের শীতল মান্নার আদিবাড়ি খানাকুলের জগৎপুরে। কাজের সূত্রে আরামবাগে স্থায়ী ভাবে থেকে যান। পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী দীপালিদেবী লোকের পরিচারিকার কাজ করেন। দিপালীদেবী বলেন, “অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু ওষুধ খেতে চান না। ইদানীং অসুস্থতা আরও বেড়েছে। প্রতিবেশীরা বলায় বাধ্য হয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে।” বাবাকে মারধর করা হয়নি বলে দাবি করেছেন শীতলবাবুর ছেলে মানু। কিন্তু তা হলে ওঁর শরীরে ক্ষত কীসের? মানুর দাবি, “উনি নিজেই সে সব ক্ষত তৈরি করেছেন।” মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি ওষুধ খেতে চান না বলে জানিয়েছেন মানু। বললেন, “বাবা বার বার অত্যাচারের অভিযোগে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি।” |
|
|
|
|
|