বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
‘দায়বদ্ধতা’ থাকবে তাঁদের কাছেই, ব্যাখ্যা ব্রাত্যর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়পত্র দিলেও সরকারের হাতেই তাদের ‘টিকি বাঁধা থাকবে’ বলে ‘আশ্বাস’ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ামক কমিটির সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘অনুমোদন’ করাতে হবে শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন। তার ফলে তারা সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে থাকবে না বলে তাঁর মত। উচ্চ শিক্ষায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর ভর্তির সমস্যা সমাধান এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ, এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টিকে দেখতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে আর্জি জানান শিক্ষামন্ত্রী।
টেকনো ইন্ডিয়া সংস্থার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুক্রবার বিধানসভায় বিল পাশ হয়েছে। এ রাজ্যের শিক্ষা-চিত্রে যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা। বিরোধীদের অভিযোগ, সাধারণ শিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আসতে দিলে শিক্ষার নামে শুধুই ‘বাণিজ্য’ হবে। সাধারণ পড়ুয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিলের জবাবি বক্তৃতায় এই আশঙ্কা নস্যাৎ করে ব্রাত্য বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলছি, যে কাউন্সিল বা নিয়ামক কমিটি আপনারা তৈরি করছেন, তার সিদ্ধান্ত সরকারকে দিয়ে অনুমোদন করাতে হবে। দুর্নীতি, বেনিয়ম আটকাতে তাতে সুবিধা হবে। সরকারের কাছে দায়বদ্ধতা থাকবে। কোনও না কোনও ভাবে সরকারের কাছে টিকি বাঁধা আছে, এ ভাবে বলা যেতে পারে।” শিক্ষামন্ত্রী জানান, টেকনো ইন্ডিয়া আপাতত ক্যাম্পাস করবে রাজারহাট ও জোকায়। পরে যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করতে আসবে, তাদের বলবেন জঙ্গলমহল, দার্জিলিং, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা মুর্শিদাবাদের মতো ‘পিছিয়ে-পড়া’ জেলায় ক্যাম্পাস করতে।
নতুন বিল স্থায়ী কমিটিতে না-পাঠিয়ে দ্রুত পাশ করানোর প্রতিবাদে বিরোধী বামফ্রন্ট তখন সভায় ছিল না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন এসইউসি-র অধ্যাপক-বিধায়ক তরুণ নস্কর। শিক্ষামন্ত্রী তরুণবাবুকে উদ্দেশ করেই বামেদের কাছে আর্জি জানান, বিষয়টিকে ‘নতুন ভাবে’ ভাবতে। ব্রাত্যের মন্তব্য, “কোঝিকোড় সম্মেলনে সিপিএম সিদ্ধান্ত নিল, কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে সমদূরত্ব রাখবে। তার পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যেটা করল, সেটা একটা প্রাসঙ্গিক বিষয়! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তাদের আপত্তি দ্বিচারিতায় ভরা!” শিক্ষামন্ত্রীর তথ্য, এখন বছরে প্রায় ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সময় সমস্যায় পড়েন। বেশি করে বিশ্ববিদ্যালয় হলে এই ‘ফাঁক’ কমে আসবে। বহু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর কর্মসংস্থানও হবে।
আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলামের নামে একটি এবং কোচবিহারে রাজবংশীদের ‘গুরু’ পঞ্চানন বর্মার নামে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আরও দু’টি বিল এ দিন পাশ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘অবহেলিত’ জেলা কোচবিহার একটি বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে। যেখানে তিনি নিজেই ১১ জুলাই যাচ্ছেন। বাম আমলের অবহেলা সরিয়ে তাঁরাই নজরুলের স্মৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় করছেন। তবে নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বিলে ‘ইসলাম’ শব্দটি না-থাকায় সংশোধনী দেন বিরোধীরা। তৃণমূলের এক বিধায়কও একই দাবি তোলেন। ব্রাত্য বলেন, “কাজী নজরুল ইসলামকে কাজী নজরুল হিসাবেই জানি। এটা নিয়ে বিতর্ক হাস্যকর, ছেঁদো ও অযৌক্তিক! তা হলে তো আমিও প্রশ্ন করতে পারি, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ওঁরা (বামেরা) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় বা রবীন্দ্রভারতীর নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রাখেননি কেন?” নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাতত ৩৪টি (বীরভূমের ১৮টি ও বর্ধমানের ১৬টি) এবং কোচবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫টি কলেজ (১৬টি কোচবিহারের, ৯টি জলপাইগুড়ির) অন্তর্ভুক্ত হবে বলে ব্রাত্য জানান।
কোচবিহারে বিজ্ঞানচর্চায় গুরুত্ব আরোপের প্রস্তাব দিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা বলেন, “ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যে নৃতত্ত্ববিদ্যা, সমাজবিদ্যা ও লোকসংস্কৃতি রাখা দরকার। কারণ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের সুযোগই বেশি।” জলপাইগুড়ি জেলায় অধিকাংশ কলেজেই স্নাতক স্তরে বিজ্ঞানে অনার্স পড়ার সুযোগ নেই বলেও তাঁর অভিযোগ। সেই অভিযোগ সমর্থন করেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গে কলাবিভাগের ছাত্রই বেশি। পাঠ্যসূচিতে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার গুরুত্বের সঙ্গেই ভাবা উচিত।” তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটাতে হলে বুনিয়াদি স্তর অর্থাৎ স্কুল থেকেই বিজ্ঞানে আগ্রহ বাড়াতে হবে । বিজ্ঞান-ভীতি দূর করতে সেই কারণে স্কুলশিক্ষা পাঠ্যক্রম কমিটি ভাবনাচিন্তা করছে বলেও জানান ব্রাত্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.