|
|
|
|
পঞ্চায়েতে মহিলাদের ৫০% সংরক্ষণ নিশ্চিত |
উচ্চশিক্ষায় ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণের ঘোষণা মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি চাকরির পরে এ বার উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র আওতায় সংরক্ষণ চালু করার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মর্মে দ্রুত বিল আনার জন্য শুক্রবার বিধানসভায় দাঁড়িয়েই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় এ দিনই সরকারের জোট শরিক কংগ্রেস এবং বিরোধী সিপিএমের তরফে উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রায় পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় তাঁকে ‘ধন্যবাদ ও অভিনন্দন’ জানিয়েছে দু’দলই। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে ‘স্বস্তিদায়ক’!
ওবিসি-র জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ চালু করতে বিধানসভায় এ দিনই পাশ হয়েছে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (আদার দ্যান শিডিউল্ড কাস্ট্স অ্যান্ড ট্রাইব্স) (রিজার্ভেশন অফ ভ্যাকেন্সিজ ইন সার্ভিসেস অ্যান্ড পোস্ট্স) বিল, ২০১২’। এর আগে বাম সরকারের পাশ-করানো একই উদ্দেশ্যের একটি বিল প্রত্যাহার করে নেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। বিলের উপরে বিতর্কের শেষে মন্ত্রীর জবাবি ভাষণের পরে কিছু বলার জন্য স্পিকারের অনুমতি চান মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় এ দিন পেশ-হওয়া মোট পাঁচটি বিলকে একসঙ্গে ধরে একটি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটা আমি বুঝি। ব্রাত্য বসুকে বলেছি। এটা করা দরকার। পরের অধিবেশনে ওঁকে বিল আনতে বলেছি।” রাতে ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী এই দিনটিকে ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঐতিহাসিক দিন’ বলে ব্যাখ্যা করেন। সেখানে তিনি আরও এক বার জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণ নিয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংরক্ষণ বিলের বিতর্কে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেছিলেন, “উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ না-থাকলে চাকরিতে সংরক্ষণ করা, না-করা সমান। উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘু বা ওবিসি-রা সুযোগ না-পেলে সংরক্ষিত পদে যোগ্য লোক মিলবে না।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেন, “নেপালবাবু যা বলেছেন, তা সমর্থন করি। উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ না-হলে শুধু আসন সংরক্ষণ করে কিছু হবে না। ভূমি সংস্কার ছাড়া পিছিয়ে-পড়া মানুষের প্রকৃত উপকার হয় না।” এর পর মুখ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের ঘোষণার পাশাপাশি জানান, সংখ্যালঘুদের তাঁরা পাট্টা বিলি করছেন। তাঁদের জন্য আবাসনও গড়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্রই সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা পয়েন্ট অফ অর্ডার এনে বলেন, “উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
সূর্যবাবু অবশ্য পরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মুখে বললেই অনেক জিনিস তো হয়ে যায় না!” যে ভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী না-হওয়া সত্ত্বেও ‘প্রথা’ ভেঙে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওবিসি সংরক্ষণ বিলের উপরে বক্তৃতা করেছেন এবং আরও চারটি বিল তার সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন, তা নিয়ে সভায় আপত্তি তুলতে চেয়েছিলেন সূর্যবাবু। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর পয়েন্ট অফ অর্ডার ‘নথিভুক্ত’ হবে না! তবে বিরোধী বামফ্রন্টের বিধায়কেরা তাঁদের বক্তৃতায় বলেন, একই উদ্দেশ্যে এবং বিষয়ে বাম আমলের বিল প্রত্যাহার না-করে রাজ্য সরকার সংশোধনী আনলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সময় বাঁচত। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরে বলেন, ওবিসি নির্ণয়ে আগের সরকারের সমীক্ষা আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। রাজ্যপালও আগের বিলটিতে সই করেননি।
বিধানসভায় এ দিন মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনের উপরে সংশোধনী বিলও পাশ হয়। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সভায় জানান, পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে মহিলাদের জন্য ৫০% সংরক্ষণের বিল পাশ হয়েছে আগেই। আগামী পঞ্চায়েত ভোটের সময়েই রাজ্য নির্বাচন কমিশন যাতে ওই নীতি কার্যকর করতে পারে, সে জন্যই আইন সংশোধন করা হল। সুব্রতবাবুর আরও দাবি, অন্ধ্রের আইন সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে সেই রাজ্যে যে ভাবে কয়েক বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন স্থগিত হয়ে গিয়েছে, বামেরাও পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণের বিল এনে এ রাজ্যে একই ‘সমস্যা’ ডেকে আনতে চেয়েছিলেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, “এখানকার বিরোধীরাও একই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! কিন্তু আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। মানুষ কাদের পক্ষে রায় দেবেন, তাঁদের ব্যাপার।”
পঞ্চায়েত নির্বাচন আইন সংশোধনের সিদ্ধান্তে ‘খুশি’ রাজ্য মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের (যিনি ঘটনাচক্রে বাম শরিক আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর স্ত্রী) কথায়, “এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন কাঙ্ক্ষিত ছিল। মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে এটি জোরালো পদক্ষেপ।” |
|
|
|
|
|