‘হিংসার তথ্য পেলেন কোথায়’
চিদম্বরমকে চিঠি দিলেন ক্ষুব্ধ মমতা
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্যের ‘প্রতিবাদ’ করে তাঁকে সরাসরি চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার মহাকরণে নিজেই এ তথ্য জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, কীসের ভিত্তিতে আপনি এই তথ্য দিলেন?”
বৃহস্পতিবারই ঘনিষ্ঠমহলে চিদম্বরমের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তাঁর নির্দেশে রাজ্যের তরফে প্রতিক্রিয়া জানান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের চিঠিতে স্পষ্ট, বিষয়টি তিনি সহজে ছাড়বেন না।
এ রাজ্যের রাজনৈতিক সংঘর্ষ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য একেবারেই ঠিক নয় জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উনি যা তথ্য দিয়েছেন তা কোথাও নেই। এমনকী, কেন্দ্রের কোনও তথ্যেও নেই!” মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে রাজনৈতিক সংঘর্ষে এ রাজ্যে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ১১৮। ২০১১ সালে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৭১ জন মারা যান। এর মধ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত (মে মাস অবধি) মৃত্যু হয় ৪০ জনের। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে তিন জনই তৃণমূল কর্মী।
এ দিনও চিদম্বরমের মন্তব্য নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। জানান, চিদম্বরমের মতো কংগ্রেস নেতারা রাজ্যে আসেন ‘ষড়যন্ত্র’ করতে।
চিদম্বরম-মমতা বাদানুবাদের ‘ছায়া’ নিশ্চিত ভাবেই কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কের উপর পড়ছে। বিশেষত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে সেই ছায়া আরও দীর্ঘ হয়েছে। মমতা-শিবির সরাসরি অভিযোগ করেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘চাপ’ তৈরির জন্যই কংগ্রেসের তরফে চিদম্বরমের ওই মন্তব্য।
কংগ্রেসের একাংশের মতে, তৃণমূলের ওপর যথেষ্ট ‘চাপ’ তৈরিও হয়েছে। তাঁরা চাইছেন, প্রণববাবু মমতাকে ফোন করুন। যাতে ‘অস্বস্তি’ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে তৃণমূল। যদিও প্রণববাবু এখন নারাজ। তৃণমূল তাঁকে সমর্থনের সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই তিনি মমতাকে ফোন করবেন বা তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, প্রণববাবু ফোন না-করলেও কংগ্রেস নেতারা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যেমন কপিল সিব্বল মহাকরণে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন। কংগ্রেস যে জোট ভাঙতে চায় না, সেই বার্তা নিরন্তর দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু তৃণমূল শিবির মনে করছে, চিদম্বরমের মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও ‘জটিল’ হয়েছে। যার ফলে মমতা সরাসরি চিঠি লিখে চিদম্বরমের ‘কৈফিয়ত’ চেয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছে কংগ্রেস। জবাবে এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত কাল যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারের কাছেই রয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে এই মন্তব্যের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই দল কোনও মন্তব্য করবে না।” কিন্তু প্রকাশ্যে এ কথা বললেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে এখন এমন ‘নরম-গরম’ নীতি নিয়ে চলতে হবে। দলের গরিষ্ঠ অংশের মতে, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের গোড়া থেকে তৃণমূলের জন্য কংগ্রেসকে প্রতিপদে ‘অস্বস্তিতে’ পড়তে হয়েছে। লোকসভা ভোটের বছর দুয়েকও বাকি নেই। তার আগে ইউপিএ-র এই শরিককে ‘তোয়াজ’ করে চলতে হলে সরকারের কোনও কাজই এগোবে না। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যেরও বক্তব্য, চিদম্বরমের মন্তব্য ‘বাস্তব’। দ্বিতীয়ত, মাওবাদী দমন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে মমতার সঙ্গে বহু বিষয়ে ‘মতান্তর’ রয়েছে চিদম্বরমের। বিশেষত, জাতীয় সন্ত্রাসদমন কেন্দ্র গঠন নিয়ে চিদম্বরমের প্রস্তাবে মমতার বাধার কথাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভোলেননি।
রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘সত্য’ বললেও আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “চিদম্বরম সত্য বলেছেন। এত দিন কেন বলেননি, জানি না! হয়তো এখন ওঁদের নিজেদের মধ্যে (কংগ্রেস-তৃণমূল) গোলমাল বেধেছে বলে বলছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের আমরা বিরুদ্ধে।” সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, বাম আমলে চিদম্বরম রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করার সময়েও তাঁরা রাজ্যের এক্তিয়ারের প্রসঙ্গ তুুলতেন। বিরোধী শিবিরে গিয়েও তাঁদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।
মন্ত্রী সুব্রতবাবু মন্তব্য করেছেন, সিপিএমকে ‘অক্সিজেন দিতে’ই চিদম্বরমের মন্তব্য। রাজ্য প্রশাসনের পরিসংখ্যানের পুনরাবৃত্তি করে সুব্রতবাবু এ দিনও বিধানসভার মিডিয়া সেন্টারে (যাকে সুব্রতবাবু ইদানীং ‘ছাতিমতলা’ বলে থাকেন) চিদম্বরমকে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। রাষ্ট্রপতি ভোটের আগে চিদম্বরমের মন্তব্য ‘উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। সূর্যবাবু অবশ্য বলেছেন, “অক্সিজেন আমাদের যথেষ্ট আছে! ওঁদেরই বরং অক্সিজেন দরকার! আগেই বলেছি, বামপন্থীদের উপরে আক্রমণ হলে আনন্দের কিছু নেই। কেউ বাদ যাবেন না। ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে!”
এ দিন সুব্রতবাবুর কড়া সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, “তৃণমূলের এখন মারাত্মক দুরবস্থা। যাঁকে এক দিন ‘তরমুজ’ বলা হত, সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে কংগ্রেসেকে আক্রমণ করানো হচ্ছে। তিনি বলছেন, আমরা নাকি সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছি। আমরা সিপিএমকে অক্সিজেন দিচ্ছি। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, প্রমাণ দিন!” মমতারও সমালোচনা করে মান্নান বলেছেন, “এই চিদম্বরম যখন সিপিএমকে হার্মাদ বলেছিলেন, তখন তৃণমূল নেত্রী তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। আজ তাঁরাই চিদম্বরমের সমালোচনা করছেন। এটা দ্বিচারিতা!”
এখন দেখার, চিদম্বরম মমতার চিঠির কোনও জবাব দেন কি না। দিলেও, কী জবাব দেন। আর তার প্রেক্ষিতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সম্পর্ক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.