|
|
|
|
তাড়াহুড়ো করিনি, সিঙ্গুর নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও সিঙ্গুর |
তাঁর সরকার সিঙ্গুরে ‘চটজলদি’ কিছু করতে যায়নি বলে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরকারের যাবতীয় কাজ সংবিধান মেনে হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গুর আইনকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেওয়ার পরে তা নিয়ে সে সময় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ফের ব্যক্ত করেছিলেন ফেসবুকে। সেই অর্থে ওই রায়ের পরে এই প্রথম বার তিনি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সরকারের তরফে ‘আত্মপক্ষ সমর্থন’ করলেন। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে চাননি। শুধু সিঙ্গুরই নয়, বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্তের কথা তুলে তারা দেখাতে চেয়েছেন মমতার জমানায় কী ভাবে সাংবিধানিক রীতি-নীতি ‘উপেক্ষিত’ হচ্ছে।
বিধানসভায় ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণ নিয়ে একটি বিলের উপর বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন খানিকটা আচমকাই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ তোলেন। নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে তাঁরা কাজ করেন না, এই কথা বলতে গিয়েই তিনি মন্তব্য করেন, “আমি এখনও বলছি, সিঙ্গুরের সিদ্ধান্ত কোনও চটজলদি বিষয় নয়। ভুল করিনি। নির্বাচন কোথায়? পঞ্চায়েত নির্বাচন তো এখনও ঘোষণাই হয়নি!” নির্বাচনী ইস্তাহারের সব প্রতিশ্রুতি তাঁরা পালন করবেন বলে ঘোষণা করতে গিয়ে এর অব্যবহিত পরেই মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, “সংবিধান মেনেই কাজ করি। নির্বাচনের জন্য কিছু চটজলদি কাজ করি না।” বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর আরও মন্তব্য, “আপনারা চটজলদি করেছিলেন বলেই এই বিলটা (ওবিসি সংরক্ষণ) আটকে গিয়েছিল!” সিঙ্গুর নিয়ে তাড়াহুড়ো না-করা এবং সংবিধান মেনে কাজ করা মুখ্যমন্ত্রীর এই দুই মন্তব্যকে একই বন্ধনীতে ফেলে ব্যাখ্যা করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বিধানসভার বাইরে কটাক্ষ করেন, “সংবিধান কেমন মেনে চলছেন, সে তো বুঝতেই পারছি! সিঙ্গুরে কেমন সংবিধান মেনেছিলেন, আদালতে বোঝা গিয়েছে! আজও (শুক্রবার) একটা ঘটনা নজরে এসেছে।” বিধানসভার শুক্রবারের কার্যসূচিতে কলেজ সার্ভিস কমিশন সংক্রান্ত একটি সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার কথা রাখা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। এ দিন কার্যসূচি থেকে তা বাদ দিয়ে সরকার জানিয়েছে, রাজ্যপালের সম্মতি না মেলায় বিলটি আপাতত পেশ হচ্ছে না। বিরোধী দলনেতার কথায়, “আগেও এক বার রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া বিল (রাজ্যের জমি ও পুনর্বাসন বিল) বিলি হয়ে গিয়েছিল। সে বার কোনও কারণ বলেননি। এ বার কারণ লিখে বিল প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলছেন, তাড়াহুড়ো করছেন না!” স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বিল-বিভ্রাট’কে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, “রাজ্যপালের সম্মতি পরে আসে সব সময়েই। পেশ হওয়ার আগে সম্মতি এলেই হল।” অগস্টের শেষে একটি সংক্ষিপ্ত অধিবেশন বসবে বলে জানান তিনি।
২০০৬-এর পরে সিঙ্গুরে এ দিনই প্রথম মিছিল করল হুগলি জেলা বামফ্রন্ট। এখনও বামেদের মিছিল সিঙ্গুরে শিল্প চেয়েই। পাশাপাশি তাদের দাবি, সরকারি সাহায্যে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’ ভেদাভেদ রাখা যাবে না। কামারকুণ্ডু স্টেশন থেকে হাজার দশেক মানুষের মিছিলে এলাকার ‘বাইরের মুখ’ই বেশি দেখা গিয়েছে। এত দিন পরে ফের আন্দোলন কেন? দলের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “তৃণমূলই সিঙ্গুরে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা আগেই বলেছি, তড়িঘড়ি আইন প্রণয়ন ঠিক হচ্ছে না।” তৃণমূল বিধায়ক তথা সিঙ্গুর আন্দোলনের নেতা বেচারাম মান্না অবশ্য বলেন, “সিঙ্গুরে দীর্ঘদিনই বামেরা জনবিচ্ছিন্ন। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। বামেরা তাই হাওয়া গরম করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চায়!” |
|
|
|
|
|