মৃত্যুর পরে সাত মাস সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মর্গে কাটাতে হল উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল থানার রঞ্জিত মণ্ডলকে।
জমি বেচে তাঁকে বিদেশে রোজগার করতে পাঠিয়েছিল জগদ্দলে একচালা ঘরে ঠাঁই নেওয়া দুঃস্থ পরিবার। তিন মাস হৃদ্রোগের সঙ্গে লড়াই করে বিদেশেই মৃত্যু হয় বছর ছাব্বিশের যুবকের।
সে-ও সাত মাস আগের কথা। কিন্তু ছেলের দেহ দেশে আনাবেন, সে অর্থবল দুঃস্থ বাবা-মায়ের ছিল না। অন্য উপায়ও অজানা। আমিরশাহির আজমান প্রদেশের এক হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল রঞ্জিতের দেহ। দুবাইয়ে ভারতের কনসাল জেনারেল সঞ্জয় বর্মার বক্তব্য, “সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাধ্যমে আমরা রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। ওঁরা আর্থিক দুরবস্থার কথা জানিয়ে আমিরশাহিতেই মৃতদেহ সৎকারের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।”
উত্তর চব্বিশ পরগনার জগদ্দলে অবন্তিপুর মণ্ডলপাড়ায় রঞ্জিতদের বাড়ি। দিনমজুর
বাবা নিমাই মণ্ডলের একমাত্র সম্বল ছিল একখণ্ড বাস্তুজমি। তা বিক্রি করে ছোট ছেলেকে দেশের বাইরে পাঠান। বড় ছেলে বাবলু মশারির কাজ করে ছ’জনের পেট চালান। ২০০৬ সালে দুবাইয়ে কাজ করতে যান রঞ্জিত। পরে আজমান প্রদেশে একটি আসবাব সংস্থায় কাজ নেন তিনি। বার তিনেক সামান্য কিছু টাকাও পাঠিয়েছিলেন।
আমিরশাহির স্বাস্থ্য দফতরের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ প্রিভেনটিভ মেডিসিন’ সূত্রের খবর, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ২০১১-র অগস্টে আজমানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রঞ্জিতকে। সেখানে তিন মাস কাটানোর পরে ৯ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। আমিরশাহিতে থাকা এক পরিচিতের মাধ্যমে বাড়িতে খবর আসে। কিন্তু কী করতে হবে বাড়ির লোক বুঝে উঠতে পারেননি। সে দেশের স্বাস্থ্য দফতর দূতাবাস মারফত জুনের শেষে রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিমাইবাবুদের ভবানীভবনে ডেকে পাঠানো হয়। নিমাইবাবু বলেন, “অর্থাভাবেই পুলিশকে বলেছিলাম, ছেলের দেহ বিদেশেই সৎকার করা হোক। ওর দেহ আনানোর ক্ষমতা আমাদের ছিল না।” আইজি সিআইডি (স্পেশ্যাল) বিনীত গোয়েল বলেন, “ওঁরা চিঠি দিয়ে জানান, আমিরশাহিতে দেহ সৎকার করায় ওঁদের আপত্তি নেই।”
কিন্তু দুঃস্থ বাবা-মায়ের কাছে ছেলের মৃতদেহ পৌঁছে দেওয়ার কোনও উপায় ছিল না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আজমানের এক পুলিশকর্তা বলেন, “পরিবার আবেদন করলে রঞ্জিতের দেহ ভারতে পাঠানো যেত। রঞ্জিত যে সংস্থায় কাজ করতেন, তারাই সব খরচ বহন করত।” কিন্তু সৎকারের সম্মতি দিয়ে ফেলার আগে সে কথা তাঁদের জানা ছিল না বলেই রঞ্জিতের বাবা-দাদার দাবি। দিল্লির আমিরশাহি দূতাবাসও এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। সৎকারের অনুমতি দিয়েছেন বটে, কিন্তু এখনও মায়ের মন মানছে না। রঞ্জিতের মা সুনীতাদেবী বলেন, “জুটকুলকে (রঞ্জিতের ডাকনাম) শেষ বারের মতো চোখের দেখাটাও দেখতে পেলাম না!” |