‘পরোপকারী’ হিসেবে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবিসংবাদী। মিত্র ইন্সটিটিউশনের (মেইন) বাংলার শিক্ষক সেই বরুণ বিশ্বাসের খুনের প্রতিবাদে শুক্রবার তেতে উঠল গাইঘাটা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোবরডাঙা স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে সুটিয়া গণধর্ষণ মামলার অন্যতম এই সাক্ষী খুন হলেও, এ দিন সকাল পর্যন্ত পুলিশ বা রেলপুলিশ তদন্তে তাঁর বাড়িতে না যাওয়াতেই ক্ষোভের সূত্রপাত। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে জনতা ভাঙচুর করে একটি ফাঁড়িতে। অভিযোগ, মারধর করা হয় পুলিশকর্মীদের। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় কমব্যাট ফোর্স। |
বৃহস্পতিবার রাতেই বরুণবাবুর দাদা অসিতকুমার বিশ্বাস খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বনগাঁ জিআরপি থানায়। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তল্লাশিতে নেমে রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে ভীম বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক দুষ্কৃতীকে। কিন্তু এ দিন সকাল পর্যন্ত পুলিশ বা রেল পুলিশ বরুণবাবুর বাড়িতে তদন্তে না যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। বেলা ১১টা নাগাদ সুটিয়া পঞ্চায়েত অফিসের নীচে পুলিশ ফাঁড়িতে ‘হামলা’ চালায় জনতা। সুটিয়া বাজার ও বিশ্বাসপাড়ায় বাঁশ ফেলে রাস্তা অবরোধ হয়। পরে গাইঘাটার ওসি অরিন্দম ভট্টাচার্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে খুনে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে বরুণ-হত্যার প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকে সুটিয়া বাজারে দোকান-পাট সব বন্ধ ছিল। ‘অরন্ধন’ও ছিল অনেক ঘরে।
কেন এই আবেগ? এলাকার বাসিন্দা জয়ন্তী বণিক, রঞ্জিত চৌধুরী, শিল্পী বিশ্বাসরা বলছেন, “বরুণবাবুর কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে, এমন নজির নেই। তা ছাড়া, এই মানুষটার জন্যই এলাকার
|
বরুণ বিশ্বাস |
দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত কমেছিল। সেই লোকটাকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া মানা যায়?” সহকর্মীরা জানান, বরুণবাবুর দেহ, আজ, শনিবার শিয়ালদহে তাঁর কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে মিছিল করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেওড়াতলা শ্মশানে। ২০০০ সালে গাইঘাটার সুটিয়ায় যে গণধর্ষণ-কাণ্ড ঘটেছিল, তার বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালাচ্ছিলেন বছর উনচল্লিশের বরুণবাবু। মঞ্চের সম্পাদক ছিলেন তিনি। বরুণবাবু-সহ কয়েক জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে একাধিক দুষ্কৃতীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আরও কিছু মামলা বিচারাধীন। বরুণ যাতে ফের সাক্ষ্য দিতে না পারেন সে জন্যই তাঁকে খুন করা হল বলে মনে করেন ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার।
এ দিন দুপুর নাগাদ রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের কর্তারা নিহত শিক্ষকের বাড়িতে যান। রেল পুলিশের এডিজি অমরকান্তি সরকার গোবরডাঙা স্টেশন চত্বর ঘুরে দেখেন। এসআরপি (শিয়ালদহ) তাপসরঞ্জন ঘোষ বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে রেল পুলিশও পৃথক ভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে।” নিহত শিক্ষকের বাবা জগদীশ বিশ্বাস বলেন, “মানুষের সেবা করবে বলে ছেলেটা বিয়ে করল না! চাপাচাপি করলেই বলত, ‘এত হুমকির মধ্যে আমাকে থাকতে হয়, কবে মরে যাব! বিয়ে করলে বউ তো জলে পড়বে’।”
|