শিক্ষা ক্ষেত্রে অশান্তির মেঘ কাটছে না কিছুতেই! ছাত্র সংসদ নির্বাচন, ছাত্র ভর্তিকে ঘিরে একের পর এক কলেজে তাণ্ডবের পরে এ বার ধুন্ধুমার বাধল পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দেওয়ায়। অশান্তির সূত্রপাত দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা সহিদুল্লা স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে, যেটি বসিরহাট কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের (পাস) পরীক্ষার কেন্দ্র। সেখানকার গোলমালের রেশ ছড়াল বসিরহাট কলেজে, যেখানে পরীক্ষার্থী বেড়াচাঁপার ওই কলেজের পড়ুয়ারা।
পরীক্ষার হলে ‘কড়া নজরদারি’ করায় বুধবার সহিদুল্লা কলেজের এক শিক্ষককে এক দফা হুমকি দিয়ে রেখেছিল বসিরহাট কলেজের এক দল ছাত্র। শুক্রবার সব পরীক্ষা মিটে গেলে কলেজে ভাঙচুর চালিয়ে ওই শিক্ষক এবং এক শিক্ষাকর্মীকে প্রচণ্ড মারধর করে ‘প্রতিশোধ’ নিল তারা। সেই খবর পৌঁছল বসিরহাট কলেজে। দু’টি কলেজেই ছাত্রেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল। জখম হলেন দুই শিক্ষক, দুই শিক্ষাকর্মী এবং কয়েক জন ছাত্র। আহত এক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দুই কলেজেই সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত পড়ুয়াদের আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের উদ্ধার করা হয়। |
ঘটনার নিন্দা করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “যে সব ছাত্র শিক্ষক নিগ্রহের সঙ্গে জড়িত, ভাঙচুর ও গোলমালের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই দুই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের এ দিনের ঘটনা নিয়ে উপাচার্যকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। অভিযোগ, পরীক্ষার হলে ‘কড়া নজরদারির’ জন্য ওই দিন পরীক্ষার শেষে হাড়োয়া স্টেশনে কয়েক জন ছাত্র সহিদুল্লা কলেজের শিক্ষক আকিকুল ইসলামকে হেনস্থা করেন এবং হুমকি দেন। পরের দিন, বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, ওই দিনই বসিরহাট কলেজের কয়েক জন ছাত্রকে মারধর করেন সহিদুল্লা কলেজের কিছু ছাত্র। |
পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সংস্কৃত পরীক্ষা ছিল। বসিরহাট কলেজের প্রায় দু’হাজার ছাত্র পরীক্ষা দিতে যান সহিদুল্লা কলেজে। পরীক্ষা শুরুর কিছু পরেই ‘কড়া নজরদারি’ নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের একাংশের ফের বচসা বাধে। পরীক্ষা শেষ হলে শুরু হয় হাতাহাতি। কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কিছু ছাত্র ভাঙচুর চালাচ্ছিল। বাধা দিতে গিয়ে তাদের হাতে মার খেয়ে গুরুতর জখম হন কিছু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। দু’জন শিক্ষিকাকেও হেনস্থা করা হয়।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিগৃহীত হচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই আশপাশের গ্রামের লোকজন চলে আসেন কলেজে। এর পরে কলেজের গেট আটকে বসিরহাট কলেজের ছাত্রদের মারধর শুরু করেন তাঁরা। এই খবর বসিরহাট কলেজে পৌঁছলে উত্তেজনা ছড়ায়। বসিরহাট কলেজের ছাত্ররা তখন সহিদুল্লা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। শুরু হয় তাদের উপরে মারধর। |
পরিস্থিতি সামলাতে সহিদুল্লা কলেজে বিশাল বাহিনী নিয়ে পৌঁছন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস (সদর)। নামানো হয় র্যাফ। অন্য দিকে বসিরহাট কলেজে পৌঁছে যান এসডিপিও আনন্দ সরকার। পুলিশের সামনেও ছাত্র সংঘর্ষ চলে কিছু ক্ষণ। সন্ধ্যা নাগাদ পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় দু’টি কলেজ থেকেই আটক পড়ুয়াদের উদ্ধার করা হয়।
বসিরহাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রমেন তলাপাত্র বলেন, “এখানে ৫টি কলেজের পরীক্ষার্থীদের আসন পড়েছে। সহিদুল্লা কলেজে আমাদের কলেজের ছাত্রদের মারধর করা হয়। তাই বসিরহাট কলেজের ছাত্ররা ঠিক করে, সহিদুল্লা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে দেবে না। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামকের কথামতো পরে সহিদুল্লা কলেজ বাদ দিয়ে অন্য কলেজের পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’’ |
সহিদুল্লা স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদেষ্ণা বিশ্বাস বলেন, “দু’দিন আগে আমাদের এক শিক্ষক আকিকুল ইসলামকে কড়া নজরদারির ‘অপরাধে’ কিছু ছাত্র হেনস্থা করে। থানায় অভিযোগ জানাই। এ দিন পরীক্ষা চলাকালীন পুলিশের সামনেই ওরা তাণ্ডব চালাল। বসিরহাট কলেজে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।” |
সংঘর্ষে জড়িত দুটি কলেজই বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। উপাচার্য কৌশিক গুপ্ত বলেন, “এ দিন আমি বর্ধমানে ছিলাম। দু’টি কলেজের অধ্যক্ষদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তকারী দল দু’টি কলেজেই যাবে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলের বৈঠকে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এ দিন যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক অভিজিৎ তলাপাত্র জানিয়েছেন।
|