কলকাতা কখনও এ রকম দৃশ্য দেখেনি। বাংলাও। ভারতও কি দেখেছে?
এশিয়াডের সোনাজয়ী অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিকের মুক্তির দাবিতে যে ভাবে শুক্রবার সরব হলেন রাজ্যের বিভিন্ন খেলার সফল মেয়ে ক্রীড়াবিদরা তা এক কথায় নজিরবিহীন। মাঠের মধ্যে যাঁদের কার্যত মুখোমুখি দেখাই হয় না (কারণ এক একজনের ইভেন্ট এক এক রকম) তাঁরা সবাই একই মঞ্চে সামিলমানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে। শুধু এক মেয়েকে পুলিশি হেনস্থার প্রতিবাদে। সবারই দাবি, আইন আইনের পথে চলুক, কিন্তু দেশের হয়ে যিনি পদক এনেছেন তাঁকে দোষী প্রমাণের আগেই এ ভাবে হেনস্তা কেন? কীভাবে বাগুইহাটি থানা এবং হাসপাতাল থেকে পিঙ্কির লিঙ্গ নির্ধারণের ছবি প্রকাশ হল?
কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানার নেই। শুধু লাল আলতায় লেখা কয়েকটি পোস্টার। আর নীল কালিতে লেখা কিছু দাবি। তার নীচেই বসে খেলার মাঠের চির উজ্জ্বল চরিত্রগুলো। এবং সবাই মেয়ে। কে নেই সেখানে? অ্যাথলিট, ফুটবলার, ক্রিকেটার, ভলিবলার, বাস্কেটবলার, সাইক্লিস্টসবাই। পদ্মশ্রী, অজুর্ন, এশিয়াড, কমনওয়েলথ, জাতীয় গেমসঅসংখ্য পদকজয়ী। কেউ অফিস ছুটির পর ছুটে এসেছেন। কেউ ঘরের কাজ ফেলে। এশিয়াডের সোনা জয়ী জ্যোতির্ময়ী শিকদার যখন বলছেন, “পিঙ্কি যে ধর্ষণ করল তার প্রমাণ কোথায়? ও কি পুরুষ? কোথা থেকে জানল পুলিশ? আমরা ওকে এত দিন দেখছি। ও তো মেয়েই। আমাকে ইতালি থেকে কোচ স্যর ফোন করছেন। জানতে চাইছেন, পিঙ্কিকে নিয়ে তোমরা কিছু করছ না কেন? লজ্জার, লজ্জার। আমাদের সম্মান কোথায় যাচ্ছে?” প্রাক্তন সাংসদ বলছেন আর হাতে ধরা মাইক্রোফোন কাঁপছে। ফেটে পড়তে চাইছেন প্রতিবাদে। সাত সমুদ্র পেরোনো বুলা চৌধুরীর প্রশ্ন, “এর পিছনে গভীর চক্রান্ত আছে। যে অভিযোগ করেছে সেই মেয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে? ধর্ষণ হলে তো সবার আগে মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে। পুলিশ তা হলে কোন অভিযোগে পিঙ্কিকে গ্রেফতার করল? জেলে রাখছে। সরকার নীরব কেন?” প্রশ্ন তোলার সময় প্রাক্তন বিধায়ক বুলার গলায় জেদ। |
জ্যোতির্ময়ী-বুলার পাশে তখন শান্তি মল্লিক, রমা সরকার, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার, কবিতা গড়াড়ি, অনিতা রায়, অনিতা সরকার, রঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, শুক্লা দত্ত, রাজ্যশ্রী চক্রবর্তী, রত্না নন্দী, কেরলের সাইক্লিস্ট লিন্সিরা। প্রতিবাদ সভায় সামিল সবাই। সবসময়ই অন্তরালে থাকতে ভালবাসেন যিনি, সেই সাতের দশকের নামী অ্যাথলিট রীতা সেনও বললেন, “পিঙ্কিকে নিয়ে যা হচ্ছে তা আমাদের সবাইকে লজ্জা দিচ্ছে।” তিনিও হাজির। হাজির ফুটবলার-কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য। সুব্রত বললেন, “ভাবতেই পারছি না এ ভাবে লিঙ্গ নির্ধারণের ছবি প্রকাশ হতে পারে ওয়েবসাইটে। প্রশাসন কী করছে? যে ভাবে পিঙ্কিকে পুরুষ পুলিশ ধাক্কা দিতে দিতে নিয়ে যাচ্ছে সেটা আমাকেও লজ্জা দিয়েছে।” উদ্যোক্তারা আমন্ত্রণ না জানালেও এসেছিলেন সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী।
এতদিন পরে কেন প্রতিবাদ? যে তিন জন মেয়ে ক্রীড়াবিদ এই প্রতিবাদ-মঞ্চের উদ্যোক্তা সেই তিন মেয়ে ফুটবলার শান্তি মল্লিক, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার এবং অনিতা রায় একযোগে বললেন, “আমরা ভেবেছিলাম আমাদের মাননীয়া মহিলা মুখামন্ত্রী বা ক্রীড়ামন্ত্রী এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন। তাই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম সবাই নীরব, তখন আমরা উদ্যোগ নিলাম।” শুক্রবার প্রতিবাদ সভা করেই অবশ্য থেমে থাকতে চাইছেন না ওঁরা। ১১ জুলাই প্রেস ক্লাব থেকে মোমবাতি মিছিলেরও ডাক দিয়েছেন ওঁরা। শান্তি বললেন, “সবাই আসতে পারেন মিছিলে। সবাইকে আমরা ডাকছি।” |