|
|
|
|
জেএনইউ-এ ‘বিদ্রোহী’ এসএফআই |
প্রণব প্রশ্নে এ বার নিজের দুর্গেই বেসামাল কারাট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ছাত্র নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসে প্রকাশ কারাট নিজে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কোন পরিস্থিতিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন করছে সিপিএম। কিন্তু কোনও লাভই হল না। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের সাধারণ সভায় গত কাল যে প্রস্তাব পাশ হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘সিপিএমের অবস্থান যুক্তিগ্রাহ্য নয় এবং তা বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বার্থবিরোধী’। বিপুল ভোটে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাবের বক্তব্য, ‘যেখানে রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি প্রার্থীর জেতার কোনও আশঙ্কাই ছিল না, সেখানে ইউপিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন করা অযৌক্তিক। বরং সিপিআই-আরএসপির মতো ভোটদানে বিরত থাকাই সঠিক পথ হতো’।
কারাটের ‘রাজনৈতিক আঁতুড়ঘরে’ তাঁর সিদ্ধান্ত এই ভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় অস্বস্তিতে এ কে গোপালন ভবন। কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপায়ই নেই সিপিএমের সামনে। বিদ্রোহীরা আগেই সিপিএমের সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন। এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য তাঁদর সঙ্গে আপসে রাজি নয়। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেএনইউ-এর এসএফআই শাখার এই সিদ্ধান্ত আমাদের সংবিধান ও গঠনতন্ত্র বিরোধী।” কিন্তু জেএনইউ-এর নেতারা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এসএফআই একটি স্বাধীন ছাত্র সংগঠন।
কাল সাধারণ সভার প্রস্তাবেও বলা হয়েছে, ‘এসএফআইয়ের কর্মসূচি অনুযায়ী, এটি স্বাধীন গণসংগঠন। রাজনৈতিক দল নয়।’ বিদ্রোহীদের বক্তব্য, এসএফআই কেন্দ্রীয় ভাবে প্রণবকে সমর্থনের বিষয়ে কোনও অবস্থান নেয়নি। তাই তাঁরা নিজেরাই নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে বাধ্য হয়েছেন। ঋতব্রতর পাল্টা যুক্তি, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি আমাদের আলোচ্যসূচির বিষয়ই নয়।”
জেএনইউ-এ ছাত্রদের মধ্যে যে বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে, আগেই তার আঁচ পেয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। তাই গত সপ্তাহে কারাট নিজেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। দলীয় নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখার আবেদন জানান কারাট। কিন্তু তাঁদের যুক্তি, সেপ্টেম্বরেই জেএনইউ-তে ছাত্র সংসদের ভোট। সিপিএম প্রণববাবুকে সমর্থন করায় নকশালপন্থী সংগঠন ‘আইসা’ তাদের বিরুদ্ধে প্রচারের অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে। সিপিএমের সিদ্ধান্ত থেকে দূরত্ব তৈরি করা ছাড়া তাদের উপায় ছিল না।
এখন সিপিএম বা এসএফআই নেতৃত্ব কী করবেন? সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, ছাত্র সংগঠনের কোনও শাখা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটি সেই শাখার স্বীকৃতি বাতিল করতে পারে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে সবাইকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা ছাড়া কোনও উপায় থাকছে না। ঋতব্রত অবশ্য বলছেন, “আমরা সব সময়ই আলোচনায় বিশ্বাস রাখি। দিল্লি পৌঁছে ওঁদের সঙ্গে কথা বলব।” এসএফআই-এর সবভারতীয় সভাপতি পি কে বিজুও এ জন্য দিল্লি আসছেন। রোশন কিশোর, পি কে আনন্দ, জিকো দাশগুপ্তর মতো জেএনইউ-র যে এসএফআই নেতারা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এসএফআইয়ের দিল্লি রাজ্য কমিটিরও শীর্ষপদে রয়েছেন। সিপিএম সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, জেএনইউ-এর এই ‘বিদ্রোহ’ দেশের অন্য কোথাও প্রভাব ফেলবে না। এমনকী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই-ও জেএনইউ-এর নেতাদের যুক্তি মানছেন না। তাই শক্ত হাতেই এই ‘বিদ্রোহ’ মোকাবিলা করা উচিত।
জেএনইউ-এর ছাত্র নেতাদের যুক্তি, সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনেই তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিল্লি এসএফআই-এর সভাপতি রোশন কিশোর বলেন, “সাধারণ সভায় যে প্রস্তাব পাশ হয়েছে, দু’জন ছাড়া সকলেই তার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ন’জন ভোটদানে বিরত ছিলেন।” এই ছাত্র নেতাদের যুক্তি, অর্থমন্ত্রী হিসেবে কর্মসংস্থান-সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ প্রণব মুখোপাধ্যায়। জেএনইউ-তে সমস্ত রাজনৈতিক বিষয়ে বিতর্ক হয়। সেখানে এই অবস্থান না নিলে জেএনইউ-এ বিপক্ষের আক্রমণের সামনে এসএফআইকে মুখ বুজে থাকতে হত। তাঁদের সিদ্ধান্ত ভুল না সঠিক, ছাত্র সংসদের নির্বাচনেই তা প্রমাণ হয়ে যাবে। |
|
|
|
|
|