|
|
|
|
সঙ্কটে ময়ূরেশ্বরের কলেজ |
শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, নেই টাকাও |
অর্ঘ্য ঘোষ • ময়ূরেশ্বর |
এলাকার মানুষ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এক সময় এই কলেজ গড়তে জান লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বহু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা সেই কলেজ নাম নিয়েছিল-- লোকপাড়া মহাবিদ্যালয়। কিন্তু বর্তমানে সঙ্কটে ময়ূশ্বেরের ওই কলেজের ভবিষ্যৎ। নিজস্ব ঘর এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে কলেজের পঠনপাঠনে। তার উপর টাকার অভাবে থমকে আছে ওই কলেজের নিজস্ব ভবন তৈরির কাজও। সব মিলিয়ে কলেজ নিয়ে চিন্তিত কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন দশক আগে স্থানীয় শিক্ষাবিদ প্রয়াত নবকিশোর হাজরার নেতৃত্বে ওই কলেজটি গড়ার উদ্যোগ নেন এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন। কলেজ স্থাপনের জন্য তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তুলে সংগ্রহ করেন প্রয়োজনীয় জমি ও টাকা। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি সদিচ্ছার অভাবেই কলেজ প্রয়োজনীয় অনুমোদন না পাওয়ায় থমকে যায় যাবতীয় উদ্যোগ। এরপর ২০০৯ সালে ওই কলেজটি গড়ার ব্যাপারে ফের উদ্যোগী হন এলাকার মানুষজন। |
|
থমকে লোকপাড়া মহাবিদ্যালয়ের কাজ। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
এলাকারই বাসিন্দা তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য করুণাসিন্ধু দাসকে সম্পাদক করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। উদ্যোক্তারা এ বারে সংগ্রহ করেন ১৫ লক্ষ টাকা ও আরও পাঁচ একর জমি। অবশেষে ২০১০ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পায় এই কলেজ। ওই সময়ই অধ্যক্ষ-সহ ৫ জন পূর্ণ শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদনও মেলে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন জনিত বিধি নিষেধের কারণে থমকে যায় শিক্ষক নিয়োগের সেই প্রক্রিয়া। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই সময় অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় কলেজের নিজস্ব বাড়ি তৈরির উদ্যোগটিও। কলেজের বাড়ি তৈরির জন্য স্থানীয় প্রাক্তন বিধায়ক সাধুচরণ বাগদি, সাংসদ রামচন্দ্র ডোম এবং রাজ্যসভার সাংসদ এএস মালিহাবাদির তহবিল থেকে ৬০ লক্ষ টাকা মিলেছিল। কিন্তু সেই টাকা বাড়ির ভিত তৈরি করতেই খরচা হয়ে গিয়েছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি। নিজস্ব বাড়ি তৈরি না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই সমস্যায় ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন ব্যবস্থা। সমস্যায় পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষও।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে স্থানীয় লোকপাড়া হাইস্কুলে ওই কলেজের অস্থায়ী ভাবে ক্লাস চলে। অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে কলেজের নিজস্ব বাড়ি তৈরি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কী করে সেই বাড়ি তৈরি হবে তা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কলেজের পরিচালক মণ্ডলী। একই অবস্থা পঠনপাঠন নিয়েও। কলেজে এখন তিনটিতে অনার্স-সহ মোট আটটি বিষয়ে পঠনপাঠন চালু রয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও প্রায় পাঁচ শতাধিক। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন স্বেচ্ছায় পাঠদানকারী শিক্ষকদের নিয়ে কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে ক্লাস চলছে। তাঁদের পরিশ্রমের কথা স্বীকার করেও ছাত্রছাত্রীরা নিরুপায় হয়েই জানিয়েছেন, এ ভাবে কলেজ চলায় তাঁদের পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনুকূল শীলও। তবে তাঁর দাবি, “নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে। পাঁচজন আংশিক শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হবে। তা ছাড়াও কিছু অতিথি শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টাও চলছে।” অন্য দিকে, কলেজ পরিচালন সমিতির সহ-সম্পাদক সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, “এক দিকে স্কুল কতৃর্পক্ষ অন্যত্র উঠে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। অন্য দিকে, তিন বছরের মধ্যে বাড়ি নির্মাণের সরকারি শর্ত। সব মিলিয়ে কলেজের নিজস্ব বাড়ি তৈরির বিষয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি।” তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, এলাকার বর্তমান বিধায়ক অশোক রায়, সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের কাছে আর্থিক অনুদান চাওয়া হয়েছে। অর্থের সংস্থান হলেই যতদ্রুত সম্ভব বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। |
|
|
|
|
|