চাঁদা তুলে দুই প্রতিবন্ধী যুবক-যুবতীর বিয়ে দিলেন পড়শিরা। শুধু তাই নয়, ৫২ হাজার টাকা তুলে বিয়ের আনন্দে পথ চলতি মানুষকেও রীতিমত ভোজ খাওয়ালেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাতে বর্ধমানের বেচারহাট কলোনির ঘটনা।
বর-কনে অর্থাৎ দুলাল দেবনাথ ও টুলু দাস দুজনেই মূক ও বধির। দুলালবাবুর বাড়ি হুগলির বলাগরের জিরাটে। টুলুদেবী বেচারহাটের বাসিন্দা। কিন্তু কী করে যোগাযোগ হলো দুজনের?
জানা গেল, এক শাড়ি বিক্রেতা মহিলা এসেছিলেন বেচারহাটে। কথায় কথায় তাঁকে টুলুর মা কানন দাস বলেন, তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে চান। কিন্তু মেয়ে বোবা-কালা বলে বিয়ে হচ্ছে না। শাড়ি বিক্রেতা মহিলা মিঠু কর্মকার এই কথা শুনে জানান, তাঁর সন্ধানে এমনই এক পাল্টি ঘর রয়েছে। হুগলির জিরাটে বোবা-কালা এক যুবক রয়েছেন। তাঁরাও এমনই এক প্রতিবন্ধী যুবতীকে ছেলের বউ করতে চান। |
কাননদেবী এই সম্বন্ধের কথা শুনে তো হাতে চাঁদ পেলেন। প্রতিবেশী বিশ্বনাথ চন্দকে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জানান। বিশ্বনাথবাবু উঠে পড়ে লাগেন যোগাযোগের জন্য। টানা তিনমাস নানা চেষ্টা চালিয়ে এই বিয়ের ব্যবস্থা করেন তিনি। কিন্তু বাদ সাধে কাননদেবীর অর্থাভাব। স্থানীয় এক হিমঘরের ঠিকে কর্মী তিনি। ছেলের বাড়ি থেকে পণের দাবি না থাকেলও বিয়ের খরচ তো আছেই। মাথায় হাত পড়ল তাঁর। তবে তাঁর চিন্তা দুর করতে মাঠে নামলেন পড়শিরা সকলেই। পাকা দেখা পর্ব চুকতেই বিশ্বনাথবাবুরা নেমে পড়লেন এলাকায় চাঁদা তুলতে। নানা মানুষের দরজায় ঘুরে তুলে ফেলেন মোট ৫২ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে জোগাড় হলো বিয়ের ভোজ দানসামগ্রী ইত্যাদি। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “আমরা বরকে নগদ ১০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়েছি। ছেলেটি সাইকেলের দোকানে কাজ করে। বউ নিয়ে ঘর করতে তো হবে!”
বর দুলাল ইঙ্গিতে জানালেন, প্রচন্ড খুশি তিনি। তিনি ভাবতে পারেননি যে তাঁরও বিয়ে হবে। এমন সুন্দরী স্ত্রী পাবেন। তাঁর এক বন্ধু নয়ন দেবনাথ বলেন, “দুলাল খুব ভালো ছেলে। তবে ওরা খুব গরিব। তাই বিয়েতে পাওয়া এই ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি সাইকেল সারাইয়ের দোকান খুলবে সে।” আর বউ জানালেন, বিয়ে যে হবে কোনদিনই ভাবিনি। আমি খুব খুশি।
বিয়ে দিতে পুরোহিত কোনও দক্ষিণা নেননি। ডেকোরেটারও বিনামূল্যে প্যান্ডেল খাটিয়েছেন। ক্যাটারারও খাবার পরিবেশনও করেছেন বিনা পারিশ্রমিকে। |