এমনিতে বছরের অন্যান্য সময় খানা-খন্দে ভরা বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় গাড়ি চালানো কষ্টের। তার উপরে বৃষ্টি হলে সেই রাস্তা চালকদের কাছে ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়। গত দু’বছর ধরে এমনই অবস্থায় গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। তাই অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে দক্ষিণ দামোদর বাস পরিবহণ কর্মচারী সমিতি শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এ দিকে, বর্ধমান-খণ্ডঘোষ হয়ে পাত্রসায়র পর্যন্ত ওই রাস্তায় এ দিন সকাল থেকে বাস না চলায় চরম দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তায় প্রতিদিন প্রচুর বাস যাতায়াত করে। পাত্রসায়রের চেকপোস্ট থেকে বর্ধমানের মোল্লারোড, দইচাঁদা, কেশবপুর হয়ে বাঁকুড়া মোড় পর্যন্ত এই রাস্তার হাল খুবই খারাপ। গত বছর রাস্তা সংস্কারের দাবিতে ধর্মঘট করেছিলেন বাসমালিক ও বাসকর্মীদের সংগঠনগুলি। তারপর তাপ্পি দেওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
বর্ধমান জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক তুষার ঘোষের দাবি, “গত কয়েক বছর ধরেই রাস্তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এই রাস্তায় বাস চালানো মানে মানুষের জীবন বিপন্ন করা। বহু বার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানালেও রাস্তা সারাই করা হয়নি। বাসকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে তাঁদের। তাই গত কাল থেকে বাস বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।” বাসচালক শেখ আনোয়ার বলেন, “খণ্ডঘোষ থানা এলাকা জুড়ে এই রাস্তার অধিকাংশই বেহাল হয়ে পড়েছে। প্রায় দিনই বাসের যন্ত্রাংশ ভাঙছে, সময় বেশি লাগছে।”
বাস বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে সকলেই। বাঁকুড়া থেকে ইন্দাস, পাত্রসায়র ও সোনামুখী ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে বর্ধমান যান। বাস বন্ধ থাকায় অনেকে ঘুরপথে ট্রেনে করে বর্ধমানে যাচ্ছেন। কিন্তু সারাদিনে বাঁকুড়া-রায়নগর লাইনে তিন বার ট্রেন চলাচল করায় অনেকে আবার বেশি টাকা দিয়ে ভাড়াগাড়িতে যাতায়াত করেছেন। ব্যবসায়ী পাত্রসায়রের মিণ্টু দত্ত বলেন, “দু’বেলা বাসেই যাতায়াত করি। বাস বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছি।” ইন্দাসের কলেজ ছাত্রী পিয়ালী হালদারের ক্ষোভ, “বাসে করে কলেজ ও টিউশন পড়তে যাই। বাস বন্ধ থাকায় আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।”
রাস্তার বেহালের কথা স্বীকার করে নিয়ে বর্ধমানের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনির্বাণ কোলে বলেন, “অনবরত ট্রাক চলাচলের কারণে বর্ষায় রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শনিবার থেকে ট্রাকগুলিকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে রাস্তার খানাখন্দ ভরাটের কাজ করা হবে।” |