ফের গয়নার দোকানে চুরির ঘটনা ঘটল বনগাঁ মহকুমায়। বাগদার হেলেঞ্চা বাজারের কাছে সোমবার গভীর রাতে ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতে বাগদা থানার সামনে দোকানে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। সিন্দুক ভেঙে কয়েক লক্ষ টাকার সোনা ও রূপোর গয়না লুঠ করে। পরে পাশের একটি গয়নার দোকানেও হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। দু’টি গেট ভেঙে ঢুকলেও কাঠের দরজাটি ভাঙতে পারেনি। দুই ব্যবসায়ী বাগদা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরেছিলেন বাবলু রায়। পরদিন সকালে দোকানে চুরির খবর পেয়ে ছুটে যান। পিছনের দু’টি গেট, কাঠের দরজা ভেঙে দোকানে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। বাবলুবাবু বলেন, “দীর্ঘদিনের চেষ্টায় দোকানটি দাঁড় করিয়েছিলাম। এক রাতে সব শেষ হয়ে গেল। প্রায় দেড়শো গ্রাম সোনা এবং প্রায় ৬ কিলো রূপোর গয়না লুঠ হয়েছে।”
এ দিকে, থানার সামনের দোকানে এ ভাবে চুরির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের কথায়, “থানার সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে এতবড় চুরির ঘটনা ঘটল অথচ পুলিশ টেরই পেল না!” বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূলের দুলাল বর বলেন, “থানার সামনের দোকানে যদি এমন ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে বোঝা যাচ্ছে বাগদার পুলিশি ব্যবস্থা কেমন। গোটা মহকুমার পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়।” ঘটনার প্রতিবাদে হেলেঞ্চা এবং বাগদার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার দোকানপাট বন্ধ রেখেছিলেন। এলাকায় মিছিলও করেছেন তাঁরা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বনগাঁর সাব-ডিভিশনাল চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক বিনয় সিংহ এবং বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির বনগাঁ মহকুমা শাখার সহ-সম্পাদক দিলীপ মজুমদার। বিনয়বাবু বলেন, “গোটা মহকুমার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ভীত। পুলিশকে বারবার ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উল্টে এলাকায় চুরি, ডাকাতি বাড়ছে।” দিলীপবাবু বলেন, “স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। নিরাপত্তার অভাবে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে দেন। বেশিরভাগ জায়গাতেই পুলিশি টহল থাকে না।”
গত ২৫ মে বনগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র বাটার মোড়ে ভর সন্ধ্যায় দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একটি গয়নার দোকানে চড়াও হয়। ডাকাতি করে পালানোর সময় বোমা ছোড়ে। তাতে জখম হয়েছিলেন ৯ পথচারী। প্রতিবাদে সে বার ব্যবসায়ীরা ৪৮ ঘণ্টা ব্যবসা-বন্ধ পালন করেন। রাজ্য পুলিশের কর্তারা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় পেয়াজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে টাকা লুঠ, গাইঘাটায় এক স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে চুরি হয়। বনগাঁ মহকুমায় প্রকাশ্যে খুন, খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, চুরি-ছিনতাই তো লেগেই আছে। প্রতি ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি পুলিশ। |