দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ • কলকাতা |
সূত্র বলতে ছিল মেঝেতে রক্তমাখা হাত ও পায়ের ছাপ এবং মোবাইল ফোনের কললিস্ট।
তার সাহায্যেই ঘটনার প্রায় সাত মাস পরে বালির দুর্গাপুরে গৃহবধূ খুনের কিনারা করল সিআইডি। সোমবার রাতে বালির হপ্তাবাজার থেকে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে ওই গৃহবধূর স্বামী নরেন্দ্র কুমারকে গ্রেফতার করা হল। তদন্তকারীদের দাবি, ঠাণ্ডা মাথায় ছক কষে স্ত্রীকে নৃশংস ভাবে খুন করেন ওই ব্যক্তি। তার পরে মিথ্যে গল্প ফেঁদে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার ধৃতকে হাওড়া আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
সিআইডি সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগে বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা রিনার সঙ্গে ভাগলপুরের নরেন্দ্র কুমারের বিয়ে হয়। বছর দুয়েক আগে কলকাতায় চাকরির সূত্রে নরেন্দ্র স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে বালির দুর্গাপুরের পঞ্চাননতলায় বাড়ি ভাড়া করে চলে আসেন। পরে নরেন্দ্রর চাকরি চলে গেলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টা নাগাদ ওই বাড়ি থেকে রিনার গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। খাটের উপর থেকে মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁর দু’বছরের ছেলে নমন কুমারকে। সিআইডি ঘরের মেঝেতে রক্তমাখা হাত ও পায়ের কয়েকটি ছাপ পায়। মোবাইলের একটি সিম-কার্ডও মেলে। সিআইডি অফিসারেরা জানতে পারেন, কিছু টাকাও খোয়া গিয়েছে। রিনা ও নরেন্দ্রর দু’টি মোবাইলই বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা।
জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে নরেন্দ্র তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেন, ঘটনার দিনই সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তিনি বিহারে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়েছিলেন ট্রেন ধরতে। হাটে-বাজারে এক্সপ্রেসে উঠে তিনি রিনার মোবাইলে বারবার ফোনও করেন। পরে খুনের খবর পেয়ে বালিতে ফিরে আসেন। ঘটনার দিন নরেন্দ্রর মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে সিআইডি জানতে পারে, নরেন্দ্র সন্ধ্যা ৭টার অনেক পরে স্ত্রীকে এক বার ফোন করলেও বাকি ফোনগুলি করেন তাঁর প্রতিবেশী অমিত ও অন্য এক আত্মীয়কে। সিআইডি আরও জানতে পারে, অমিতবাবু দুর্গাপুরের বাড়িতে পৌঁছনোর আগেই নরেন্দ্র মোবাইলে ওই আত্মীয়কে জানান, রিনার গলাকাটা দেহ মিলেছে। তিনি যেন এখনই বালিতে পৌঁছন।
এর পরে সিআইডি খবর পায় যে, ঘটনার দিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল অশান্তি হয়। রিনার ফোনের কললিস্ট থেকে দেখা যায়, তিনি শেষ ফোনটি করেন পড়শি এক তরুণীকে। সিআইডি-র দাবি, ফোনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া শুনতে পেয়েছেন বলে ওই তরুণী জেরায় জানান। সিআইডি জানতে পারে, চাকরি না থাকায় নরেন্দ্র চরম অনটনে ছিলেন। খরচ কমাতে স্ত্রীকে তিনি ভাগলপুরে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রী রাজি না হওয়ায় অশান্তি চরমে ওঠে।
তদন্তকারীদের ধারণা, এর পরেই স্ত্রীকে খুনের ছক কষেন নরেন্দ্র। সেই মতো ছেলের মুখ বেঁধে তার সামনেই প্রথমে ওড়না দিয়ে রিনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর গলা কেটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সিআইডি জানায়, তদন্তের সময়ে একাধিক হাত ও পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিল। কারণ ঘটনার খবর পেয়ে এলাকার লোকজন অনেকেই ওই ঘরে ঢুকেছিলেন। তবে ফরেন্সিক তদন্তে রক্তের মধ্যে পাওয়া একটি পায়ের ছাপের সঙ্গে নরেন্দ্রর পায়ের ছাপ মিলে যায়। ওই রিপোর্ট আসার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। |