মুখোমুখি...
আজ লোকে চায় স্টারের পিঠে টোকা
দিয়ে বলবে, ‘হাই বাডি, হাউ আর ইউ’

পত্রিকা: রোহন গাওস্কর একদিন বলছিলেন আশির দশকের মাঝামাঝি আপনি আর রোহন মিলে নিজেদের মধ্যে একটা ক্লাব চালু করেছিলেন। ক্লাবের নাম ‘লুজার’স ক্লাব’। এর পিছনে কারণ ছিল যে আপনাদের বাবারা এত বিখ্যাত এবং এত বড় উইনার যে সন্তানরা যা-ই করুক না কেন, লুজার থেকে যাবে। আজ অভিষেক বচ্চন হয়ে ওঠার পর কী মনে হয়? ক্লাবটার প্রয়োজন ফুরিয়েছে?
অভিষেক: রোহনটা আমার পেছনে সব সময় লাগে। আর বলে তুই ক্লাবে থাকার অধিকার হারিয়েছিস। ধরে নে, তুই আর মেম্বার নোস।

পত্রিকা: রোহনের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে?
অভিষেক: যোগাযোগ মানে? রোহন আমার বুজম ফ্রেন্ড। বোম্বাই স্কটিশে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।

পত্রিকা: কিন্তু আপনি সুইৎজারল্যান্ডের স্কুলে পড়তেন না?
অভিষেক: হ্যাঁ, সেটা পরে। আর আমি চলে গেলেও রোহনের সঙ্গে কনট্যাক্ট যায়নি। মাসে অন্তত একবার আমরা মিট করি। রোহন ভীষণ ধৈর্যশীল ছেলে। ওর কাছ থেকে এই একটা জিনিস আমি বরাবর শেখার চেষ্টা করি ধৈর্য।

পত্রিকা: ছবি রিলিজের আগে প্রতি শুক্রবারের টেনশনটা সামলাতে শিখেছেন, না এখনও লেবার পেন হয়?
অভিষেক: না ওটা হতেই থাকে। প্রতিবার হয়।

পত্রিকা: বাড়ির লোক তখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারে এ আজ একটু টেনশনে রয়েছে। হয় বেশি বাথরুমে ঢুকছে। নয় বারবার রিমোট নিয়ে খেলছে। নয় বেশি চুল আঁচড়াচ্ছে।
অভিষেক: না, না ও সব কোনও বদলই হয় না। প্রথমত এখন বাড়ি বসে টেনশনের ব্যাপারই থাকে না। ছবি রিলিজের পরও তো এখন আমাদের প্রোমোশনে ছুটতে হয়। সেটাই ভয়ংকর ব্যস্ততার মধ্যে রাখে। এখন তো ড্যাডের আমল নয় যে প্রোমোশন বলে কোনও বস্তু নেই।

পত্রিকা: কিন্তু আপনাকে যদি বিকল্প দেওয়া হত, আপনি নিশ্চয়ই ড্যাডের আমলেই ফিরে যেতেন। যখন রাস্তাঘাটে গিয়ে এ সব প্রোমেশন-টোমোশন করতে হত না। স্টাররা নিশ্চিন্তে স্টারই থাকতে পারতেন।
অভিষেক: এই বিকল্পটা এখন আর নেই। আজকের পৃথিবী দাবি করে আপনি শুধু ছবিতে অভিনয় করেই থেমে যাবেন না, নিজে দাঁড়িয়ে সেই ছবির বিপণন করবেন। আর করবেন না-ই বা কেন? আমার তো মনে হয় ছবিতে অভিনয় করতে যতটা সময় আমরা দিই সেই একই পরিমাণ সময় ছবির প্রোমোশনে দিলে ক্ষতিটা কী?

পত্রিকা: ক্ষতি তো আছেই। রোম্যান্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে। তখন আর তারারা দূরের তারা থাকে না। হাটেবাজারে তারা জনগণ হয়ে যায়। স্টারের সেই রহস্যময়তাটাই হারিয়ে যায়।
অভিষেক: অ্যাবসোলিউটলি নট। আজকের জগতে আপনি ভাই যদি ও সব দূরত্ব তৈরি করতে চান, আর দূরের তারা হতে যান অবধারিত লোকে আপনাকে ভুলে যাবে। আজ যুগ বদলে গেছে, সমাজ বদলে গেছে। আজ লোকে ওই সব তারার শ্রদ্ধা-টদ্ধা করতে চায় না। বরঞ্চ তারা চায় আপনার পাশে বসে পিঠে টোকা দিয়ে বলবে, ‘হাই বাডি, হাউ আর ইউ?’ আজকের পৃথিবী চায় অ্যাক্টরের সমান-সমান বসতে। তাকে নভশ্চর দেখতে নয়। বড় অভিনেতারাও তো আজ তাই আউট অফ রিচ নয়।

পত্রিকা: ২০১২ জুলাই। অমিতাভ বচ্চন অভিনয় জীবন শুরু করছেন। কী ভাবে এই সব নতুন চ্যালেঞ্জ সামলাতেন বলে মনে হয়?
অভিষেক: উঁহুহু... খুব কঠিন প্রশ্ন। ওই মুহূর্তটায় ঠিক না বসালে বাস্তবোচিত উত্তর দেওয়া যাবে না। তবে সবাই জানেন অমিতাভ বচ্চনের একটা দুর্ধর্ষ ক্ষমতা রয়েছে। বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার। নইলে চল্লিশ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে সারভাইভ করতে পারতেন না।

পত্রিকা: আপনি বলতে চান এক আমলের গ্রেট অন্য আমলেও অবধারিত গ্রেট থাকতেন?
অভিষেক: আমি ঠিক তা বলছি না। তাঁরা তখনই সব আমলে গ্রেট হতে পারবেন যদি পরিবর্তিত সময়ে মানিয়ে নেওয়ার উপস্থিত বুদ্ধি তাঁদের মধ্যে থাকে। আমি পুরোনো আমলের অসাধারণ কিছু অভিনেতাকে জানি যাঁরা এই প্রজন্মের পরীক্ষায় হারিয়ে গেছেন। একটাই কারণ বদলের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে পারেননি।

পত্রিকা: ‘গুরু’তে অভিনয় করে আপনি খুব প্রশংসা পেয়েছিলেন...
অভিষেক: (কথা শেষ করতে না দিয়েই) থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ।

পত্রিকা: বলছিলাম সেটা কি কঠিন একটা মাপকাঠিও হয়ে যায়নি?
অভিষেক: সেটা তো ভালই। আমি তো তাই চেয়েছিলাম। সব সময় যাতে আমার বাউন্ডারিটা বিস্তৃত হতে পারে। ‘গুরু’ দেখে বেরিয়ে বাবা আমায় স্ট্রেট জড়িয়ে ধরেছিলেন। একটা টাইট হাগ দিয়ে বলেছিলেন, ‘অভিষেক, তোমার জন্য আজ আমি খুব গর্বিত’। এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর পাইনি।

পত্রিকা: এক ছাদের তলায় মানুষটার সঙ্গে থেকে কী শিখেছেন?
অভিষেক: শিখেছি কোনও কিছুকে ‘হবেই’ ধরে না নিতে। শিখেছি নিজের কাজে বিশ্বাস রাখতে। শিখেছি নিজের কাজে মন-প্রাণ ঢেলে দিতে। অভিনয় কেউ শেখাতে পারে না কিন্তু এগুলো... (কথা শেষ করতে না দিয়ে পেছন থেকে অজয় দেবগন: এত মিথ্যে বলছিস কেন, আমি তো তোকে অভিনয় শিখিয়েছি।)
অভিষেক: (হো হো হাসি) বাবার কাছে আর শিখেছি বিনয়ী হতে। সিনসিয়ার হতে। কখনওই পরিশ্রম থেকে সরে না যেতে।

পত্রিকা: বাবার সঙ্গে কাজ করার সময় কি আপনার ভয় হয়?
অভিষেক: বাবার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কার না ভয় হয়? আমি তাঁর ছেলে হতে পারি, কিন্তু আমিও তো তাঁর ফ্যান। তা হলে?

পত্রিকা: বাবা নিয়ে তা-ও আপনি অনেক জায়গায় বলেছেন। একজনের সম্পর্কে আপনাদের পরিবারের মতামত শোনা যায় না। একটু বলুন তো তাঁর সম্পর্কে... রাজেশ খন্না...
অভিষেক: ওহ, মিস্টার রাজেশ খন্না! উনি লিভিং লেজেন্ড। অসাধারণ সব কাজ করেছেন। সত্যি বলতে কী, ইন্ডাস্ট্রিতে যখনই কেউ আসে সে মিস্টার খন্না সম্পর্কে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। ওঁর লাইব্রেরিতে যে সব কাজ রয়েছে, তুলনাহীন। ওঁকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেকবার মিট-ও করেছি। ওঁর দুই মেয়ে টুইঙ্কল আর রিঙ্কি আমার খুব বন্ধু। নিয়মিত আমার সঙ্গে দেখা হয়।

পত্রিকা: আপনার কাছে রাজেশ খন্নার সবচেয়ে প্রিয় ছবি কোনটা?
অভিষেক: ‘আরাধনা’। অবশ্যই ‘আরাধনা’। ‘আনন্দ’-ও থাকবে।

পত্রিকা: কখনও এমন হয়েছে ডিনার টেবলে রাজেশের অভিনয় নিয়ে আপনার বাবার সঙ্গে আলোচনা করেছেন?
অভিষেক: কোনও দিন না।

পত্রিকা: কেন?
অভিষেক: কারণ আমাদের ডিনার টেবলে ফিল্মের আলোচনা নিষিদ্ধ। ড্যাডের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে আমার বেশির ভাগ আলোচনাই হয়েছে বাড়ির বাইরে বা একান্তে। সবাই যেখানে রয়েছে আর একসঙ্গে বসে খাচ্ছে, সেখানে ঘুরেফিরে সেই ফিল্ম নিয়ে আলোচনা আমার মা ব্যান করে দিয়েছেন। মা-র কড়া হুকুম। অন্য যে কোনও বিষয় চলতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স চলতে পারে। স্পোর্টস চলতে পারে। শুধু ফিল্ম নয়।

পত্রিকা: কোনও ছবিতে অভিনয় করার আগে কি পরিবারে তা নিয়ে আলোচনা করেন?
অভিষেক: না একেবারেই করি না। যদিও বাড়িতে তিন-তিন জন অভিনেতা আছেন। কারণ কী জানেন? আমি যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, রোহিত শেঠির ছবিতে কি আমি কাজ করব? তা হলে ধরে নিতে হবে আমার নিজের যোগ্যতা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে। কারণ আপনি নন, কাজটা করতে হবে আমাকেই। আমি কোন ছবিতে অভিনয় করব, আর কোন ছবিতে করব না, সে ব্যাপারে আমাকে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদিও আমি জানি, বাড়িতে জিজ্ঞেস করলে, তাঁদের উপদেশ বা গাইডেন্স আমি পাব, কিন্তু কেন জিজ্ঞেস করব?

পত্রিকা: আপনার বিরুদ্ধে অনেকের একটা পুরোনো অভিযোগ আছে। জানেন তো?
অভিষেক: অভিযোগ (অবাক হয়ে) সে কী? কেন?

পত্রিকা: আপনি ভারতের সেরা সুন্দরীকে বগলদাবা করে বিয়ে করে ফেলেছেন বলে?
অভিষেক: হো-হো-হো (প্রচণ্ড হাসি। থামছেই না)

পত্রিকা: আপনি এত হাসছেন কেন? এই কথাটা নিশ্চয়ই আগেও অনেক বার শুনেছেন?
অভিষেক: না, এ ভাবে সামনে বসে কেউ বলার সাহস দেখায়নি। (আবার হাসি)

পত্রিকা: ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন কি তা হলে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়ে রিটায়ার করলেন?
অভিষেক: একেবারেই না। এখন ও বেবি-কে দেখছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমি গভীর সুখী হব যদি ভাল রোল পেয়ে ও আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়।

পত্রিকা: আপনার সন্তান জন্মের আগে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
অভিষেক: জারি করা হয়েছিল কিন্তু সেগুলোতে আমাদের পরিবারের কোনও ভূমিকাই ছিল না। চমৎকার ভাবে কিন্তু আমার বা আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়। আরে ভাই, আমার যদি ইনফরমেশন ব্রডকাস্টিং মিনিস্ট্রিকে প্রভাবিত করার এত ক্ষমতাই থাকত, তা হলে ওদের দিয়ে আমি কত কিছুই না করিয়ে নিতাম। তবে একই সঙ্গে বলি সন্তানজন্মের সময় ভারতীয় মিডিয়া আমাদের প্রতি যে সহানুভূতি আর ভালবাসা দেখিয়েছে তাতে আমরা খুব কৃতজ্ঞ। আমি ট্যুইটারেও মিডিয়াকে ধন্যবাদ দিয়েছি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.