আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম কমিটির বিগত ৩২ বছরের আয়ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখতে বিশেষ অডিট করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিবার শিলিগুড়ি সার্কিট হাউজে স্টেডিয়াম কমিটির ৬ সদস্যের সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়। এ দিন আরও ১৪ জন সদস্য মনোনিত করে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। ১৯৮০ সালে স্টেডিয়াম তৈরির পর সোসাইটি গঠনের আইনে ‘শিলিগুড়ি স্টেডিয়াম কমিটি’ নথিভুক্ত হয়। বাম জমানায় তৈরি স্টডিয়াম কমিটির আয়ব্যয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর তা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয় ক্রীড়া মন্ত্রী মদন মিত্র। পুরনো কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা তিনি ঘোষণা করেন। তবে সোসাইটি নথিভুক্তকরণ আইনে স্টেডিয়াম কমিটি গড়ে ওঠায় প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সরানো সম্ভব হয়নি। তাদের নিয়ে কমিটির সভাপতি তথা জেলাশাসক সম্প্রতি বৈঠক ডেকে আর্থিক হিসাব নিকেষ খতিয়ে দেখতে ভার দেন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তবকে। তাঁকে কমিটির সচিব হিসাবে মনোনিত করা হয়। এ দিন তিনি যে রিপোর্ট দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, শুরু থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কমিটির বিভিন্ন বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের লিখিত নথিপত্র নেই। স্টেডিয়ামের ঘরগুলি বিভিন্ন সংগঠনকে দেওয়ার ক্ষেত্রেও লিখিত কাজগ নেই। বিভিন্ন সময়ে বিয়ে বাড়ি, মেলা, অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্টেডিয়াম, ঘর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও অসঙ্গতি রয়েছে। সে কারণে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টকে দিয়ে বিশেষ অডিট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুরনো কমিটির অন্যতম তথা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অজিত সরকার, বীরেন বসু। অজিতবাবু অনিয়মের অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “কোথাও অনিয়ম হয়নি। প্রতি বছর অডিট করা হয়েছে। যে সব সংগঠনকে ঘর দেওয়া হয়েছে তা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে না। কোনও ক্ষেত্রে অনিয়ম রয়েছে বলে কারও মনে হলে তিনি আইনের দ্বারস্থ হতেই পারেন।” শিলিগুড়ির বিধায়ক হিসাবে স্টেডিয়াম কমিটির অন্যতম সদস্য রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনিও এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কথায়, “স্টেডিয়ামে বিভিন্ন সংগঠনকে ঘর দেওয়া, মেলা, অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। শুরু থেকে ১০ বছর কমিটির বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার নথি নেই। স্টেডিয়াম চত্বরে যে সুইমিং পুল চলে তা কী চুক্তিতে কত দিনের জন্য বরাত পাওয়া সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।” স্টেডিয়াম কমিটি সভাপতি জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, স্টেডিয়ামের সুষ্ঠু দেখভালের জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিয়েবাড়ি বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্টেডিয়াম বা ঘর ভাড়া বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে এ সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার মধ্যে অজিতবাবু সিটুর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক। বীরেনবাবু সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক। ছিলেন প্রয়াত মেয়র বিকাশ ঘোষ। তৎকালীন দার্জিলিঙের ডেপুটি কমিশনার, শিলিগুড়ির এসডিও, পূর্ত দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার, শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তাঁরা ব্যক্তি এবং পদাধিকার হিসাবে ছিলেন। সেই মতো বর্তমানে ওই পদগুলিতে যাঁরা থাকবেন তাঁরাও কমিটির সদস্য। জেলাশাসক কমিটির সভাপতি হন। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা স্থায়ী, মনোনিত, সহযোগী সদস্য ঠিক করতে পারেন সাময়িক ভাবে। স্থানীয় বিধায়কও কমিটির সদস্য হন। এ দিন যাঁরা সদস্য হিসাবে মনোনিত হয়েছেন তাঁরা হলেন, তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল, জয়দীপ নন্দী। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব তথা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা অরূপ রতন ঘোষ, তৃণমূল নেতা তথা মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সদস্য সৌমিত্র কুণ্ডু। পীযূষ কান্তি বসু, নন্দভূষণ দ্যঁ, অশোক সরকার, বাচ্চু দত্ত, বিজয় সাহা, পরিমল ভৌমিক। পুরসভার মেয়র, মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি, ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)-এর এক জন প্রতিনিধিকেও সদস্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। |