মামলা লড়ে উপরি আশীর্বাদ
স্বামীর কাছে দিনের পর দিন মারধর খেয়েও মুখ বুজে সহ্য করেছেন স্বপ্না দেবী। আবার কোথাও সম্পত্তি লিখে না-দেওয়ায় ৭৫ বছরের বৃদ্ধা রেখা দেবীকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। খোরপোষ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও দীপা দেবীকে তা দিতে টালবাহানা চলেছে। ওই নির্যাতিতা মহিলারা কী ভাবে সমস্যার সমাধান হবে তা বেবে কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না। একঝাঁক তরুণ আইনজীবীর সহায়তায় সকলেই সুবিচারের রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন। নিরাশ্রয় বৃদ্ধা ঘর ফিরে পেয়েছেন। খোরপোষের টাকা পেয়েছেন নির্যাতিতা বধূ। স্বামীর বাড়িতেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে অত্যাচারিতা বধূর। পুলিশ-প্রশাসন, বিচার বিভাগ তো বটেই, একঝাঁক তরুণ আইনজীবীর সহায়তার কথা বলতে গিয়ে নির্যাতিতা মহিলাদের অনেকেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ স্বস্তির পাওয়ার কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ফেলে দু’হাত তুলে নামমাত্র পারিশ্রমিকে মামলা লড়ার জন্য রিমা সরকার, সিদ্ধি শেঠিয়ার মতো আইনজীবীদের দু-হাত তুলে আশীর্বাদও করেছেন। রেখা দেবীর কথাই ধরা যাক। শিলিগুড়ি টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা রেখা দেবীর বয়স ৭৫ বছর। স্বামীর মৃত্যু আগেই হয়েছে। তার পরে ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে। রেখা দেবী পুত্রবধূ ও নাতির সঙ্গে থাকেন। কিন্তু, তিনি যাতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নাতির নামে লিখে দিতে বাধ্য হন, সে জন্য দিনের পর দিন অত্যাচার চলে তাঁর উপরে। রাজি না-হওয়ায় তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়। এলাকার নেতা-কর্তার দোরে ঘুরে শিলিগুড়ি থানায় যান রেখা দেবী। আইসি পিনাকী মজুমদারের পরামর্শে ‘প্রোটেকশন অফ ওম্যান ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী মামলা করার জন্য রেখা দেবী জেলার ‘প্রোটেকশন অফিসার’ সন্দীপ মাইতির সাহায্য চান। এর পরেই রেখা দেবীকে পাঠানো হয় রিমা, সিদ্ধিদের মতো আইনজীবীর উদ্যোগে তৈরি সংস্থার কাছে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে মামলার রায় দেন বিচারক সন্তোষ পাঠক। রেখা দেবী এখন বাড়িতে রয়েছেন। নিরাপদেই। নিয়মিত তাঁর খবরাখবর রাখছেন আইনজীবীরা। রেখা দেবী বললেন, “মামলা বাবদ মাত্র ১০০০ টাকা খরচ হয়েছে। ছেলেমেয়েরা সত্যিই ভাল কাজ করছে। ওঁরা যে ভাবে আমার খবরাখবর রাখছে তা ভাবা যায় না।” রিমা, সিদ্ধিরা জানিয়ে দিয়েছেন, আইন নিয়ে স্নতকোত্তর পর্যায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ওঁরা ৫ জন মিলে শুধু টাকা উপার্জনের জোর না-দিয়ে গরিব মানুষজনকে নামমাত্র খরচে আইনি পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সামিল অন্যরা হলেন, সপ্তক সরকার, বীরেন্দ্র রসৈলি ও চয়নিকা ভট্টাচার্য। থানায়, প্রোটেকশন অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ওঁরা অন্তত ১১ জন নির্যাতিত মহিলাকে নিরাপদে জীবন কাটানোর কাজে সাহায্য করেছেন। রিমার কথায়, “রেখা দিদা যখন আমাদের কাছে এল তখন ওঁর কষ্টের কথা শুনে আমাদের চোখেও জল এসে যায়। সকলের সাহায্যে আমরা ওঁকে ঘরে ফিরিয়ে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি। টাকা তো অন্য সম্পন্ন মক্কেলের থেকে আয় করতে পারব। এখানে ওঁর আশীর্বাদ পেয়েছি। যা টাকার চেয়ে অনেক বড়। আমাদের সংস্থাটাও সে জন্যই গড়া হয়েছে।” পাশাপাশি, সিদ্ধি জানান, তাঁরা আইনের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়েই এলাকার দরিদ্রদের আইনি সহায়তা দিতে শুরু করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা একেবারেই খরচ করতে পারবেন না, তাঁদের জন্য সরকারের আইনি সহায়তা বিভাগ তো রয়েইছে। পাশাপাশি, আমরাও নামমাত্র খরচে সহায়তা করতে চাই। গরিব মানুষজন যেমন উপকৃত হবেন, তেমন আমাদের অভিজ্ঞতাও বাড়বে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.