সম্পাদকীয় ২...
শূন্য হইতে শুরু
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতকোত্তর স্তরে নিজ প্রতিষ্ঠানের স্নাতক ছাত্রদের জন্য কত শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হইবে, তাহা লইয়া গোল বাধিয়াছে। ছাত্র আন্দোলনের চাপে রাজ্য সরকার আপন সিদ্ধান্ত বদলাইতেছে, কিন্তু তাহাতেও বিক্ষোভ মেটে নাই। অথচ সমগ্র বিবাদটির গোড়ায় গলদ। যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য সংরক্ষিত আসন হওয়া উচিত ৫০ শতাংশও নহে, ৪০ শতাংশও নহে শূন্য। স্নাতক স্তরে যে ছাত্র প্রেসিডেন্সি কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়াছে, স্নাতকোত্তর স্তরে তাহার সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়িবার কী অধিকার জন্মায়? কোন যুক্তিতে সে বর্ধমান কিংবা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ন্যায় অধিক সুবিধা পাইবে? স্নাতক স্তরের ছাত্রদের প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায় পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল বাহির করা। স্নাতকোত্তর শিক্ষা নিশ্চিত করিবার কোনও দায় নাই, তাহার প্রতিশ্রুতি দিবার প্রয়োজনও নাই। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করিতে হইবে। বিশ্বের সমস্ত উৎকৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এমনই হইয়া থাকে। শিক্ষার উৎকর্ষের জন্য হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডের স্নাতক ছাত্র সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর স্তরে স্থান পাইতে পারে, কিন্তু পূর্বে প্রতিষ্ঠানভুক্ত হইবার কারণে তাহা পায় না। যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ প্রতিযোগিতার জন্য ছাত্রদের প্রস্তুত করা, প্রতিযোগিতা হইতে তাহাকে আড়াল করা নহে।
তবে কি উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের করণীয় কিছুই নাই? মেধাবী হইয়াও অর্থবলের অভাবে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুল-কলেজে উচ্চমানের প্রশিক্ষণ পায় না, বিত্তবান পরিবারের সন্তানদের সহিত তাহারা আঁটিয়া উঠিতে পারে না। ফলত দেখা যায়, নামী-দামি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সম্পন্ন পরিবারের সন্তানরাই অধিকাংশ আসন দখল করিয়াছে। মেধার পরীক্ষা যে স্তরেই হউক না কেন, স্বল্পবিত্ত পরিবারের ছাত্ররা অধিক সংখ্যায় বাদ পড়িবে, এমন সম্ভাবনাই অধিক। এই সংকট সকল দেশেই দেখা গিয়াছে। ইহার প্রতিকারও প্রয়োজন। কিন্তু আসন সংরক্ষণ তাহার ব্যবস্থা নহে। উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ যাহাতে অধিক ছাত্রছাত্রী পায়, তাহার জন্য আরও বেশি সংখ্যায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অত্যন্ত প্রয়োজন, এবং সেই নীতিও গ্রহণ করা হইয়াছে। অচিরে যাহাতে এ দেশে তরুণ-তরুণীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ৭ শতাংশ হইতে বাড়িয়া অন্তত ১৫ শতাংশ করা যায়, যোজনা কমিশন তাহারই পরিকল্পনা লইয়াছে। সরকারি তরফে ইহাও দেখিতে হইবে, যাহাতে স্কুলের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগগুলির পঠন-পাঠনের যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকে। অন্যথায় বহু প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রী বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা হইতে বঞ্চিত হইবে। দরিদ্র পরিবারের ছাত্রদের জন্য নানা মেধাবৃত্তির ব্যবস্থা করাও সরকারেরই কর্তব্য। সর্বোপরি, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন ও মূল্যায়নের মাধ্যমে তাহাদের মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই সকল উপায়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় আনিতে হইবে। কিন্তু তাহার জন্য স্নাতক স্তরের ছাত্রদের জন্য স্নাতকোত্তরে আসন সংরক্ষণ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অন্যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.