হাওড়া স্টেশন চত্বরের পরে এ বার হাওড়া বাসস্ট্যান্ড।
রীতিমতো ‘সিন্ডিকেট’ বানিয়ে একটি চক্র হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে ‘তোলাবাজি’ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, এখন স্ট্যান্ডে ঢুকলেই প্রতিটি বাসকে তোলাবাজদের দৈনিক ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। ৫০ টাকা দিলে মিলছে স্ট্যান্ডের বাইরে ২০ মিনিট গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার সুযোগ। তার বেশি দাঁড়াতে হলে প্রতি মিনিটের জন্য ‘জরিমানা’ লাগছে ৫ টাকা।
হাওড়া স্টেশন চত্বরে তোলাবাজি নতুন নয়। কিন্তু কমিশনারেট তৈরির পর পুলিশ-প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথেষ্ট সক্রিয়। এই অবস্থায় খোদ হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ডে এমন ঘটনা পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাকে কার্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ, এই চক্রটি শুধু তোলাবাজিই করছে না, স্ট্যান্ড থেকে কোন বাস চলবে এবং চলবে না তা-ও নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকী, ‘তোলা’ না দিলে ‘হুমকি’ দিয়ে স্ট্যান্ডে বাস ঢোকাও বন্ধ করছে। বহু ক্ষেত্রে ‘প্রাণে মারার হুমকি’ও দিচ্ছে। দূরপাল্লার বাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ, ওই চক্রের বিরুদ্ধে দফায় দফায় মন্ত্রী, পুলিশ ও নেতাদের জানিয়েও ফল হয়নি। বাস মালিকদের সংগঠন ‘ইন্ট্রা অ্যান্ড ইন্টার রিজিওন বাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর নামেই রীতিমতো কুপন ছাপিয়ে টাকা তুলছে চক্রটি।
হাওড়া দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড যা দিঘা বাসস্ট্যান্ড নামে পরিচিত সেখান থেকে প্রতিদিন পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলির মধ্যে ২২০টি বাস চলে। এই ২২০টি বাস থেকে রোজ কুপনের বিনিময়ে তোলা হয় ৩০ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতি দিন ৬৬০০ টাকা করে মাসে আয় হয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে বঙ্কিম সেতুতে ওঠার আগে ২০ মিনিট ধরে যাত্রী তোলার সুযোগ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা। বাস সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ বারিক বলেন, “আমাদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কিছু প্রাক্তন বাসমালিক ও স্থানীয় দুষ্কৃতীর মধ্যে ওই টাকা ভাগ হয়। বিষয়টি জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার ও সরকারকে জানিয়েছি। লাভ হয়নি।”
সংগঠনের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশে সংগঠনের অফিসের টাকা ও সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিসিভারকেও অফিসে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে হেনস্থা করা ও ভয় দেখানো হচ্ছে।
ওই সংগঠনের রিসিভার অরূপকুমার বর্মণ বলেন, “গত বছর অগস্টে কিছু লোক অফিসে ঢুকে টাকা ও কাগজ ছিনতাই করে। তার পর থেকে অফিস যাইনি। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালতকে সব জানাই। বেআইনি ভাবে টাকা তোলার বিষয়টিও জানানো হয়েছে।” হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের বক্তব্য, “অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু কুপন নিয়ে যে টাকা তোলা হচ্ছে এ নিয়ে কো নও বাসমালিক লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলেই গ্রেফতার করব। এটা চলতে পারে না।” |