দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
নির্জলা পুজালি
তীর্থের কাক
কোথাও সারা দিনে মাত্র দু’ঘণ্টার জন্য জল পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও এক মাস পরে এক বার জল এসেছে। এ বার গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুজালি পুরসভার সর্বত্র এই ছবি দেখা যাচ্ছে। শুধু পুরবাসীরাই নন, এই অভিযোগ খোদ চেয়ারম্যান ফজলুল হকের। এই অবস্থার জন্য কেএমডব্লিউএসএ-কেই দায়ী করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
মহেশতলা, বজবজ এবং পুজালিতে কেএমডব্লিউএসএ-র লাইনের সাহায্যে গার্ডেনরিচের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। বজবজ পুরসভার পরেই পুজালি পুরসভা। তিনটি পুরসভায় রিজার্ভারে জল ভরা এবং সরবরাহের সময়ও ভিন্ন। কিন্তু অভিযোগ, পুজালিতে যখন জল পৌঁছনোর কথা, তখন বজবজে সরবরাহ লাইনের ভাল্ভ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। ফলে যে পরিমাণ জল পুজালির রিজার্ভারে পৌঁছনোর কথা, তার থেকে অনেক কম জল পৌঁছচ্ছে। ফলে পুজালিতে আগে যেখানে দিনে দু’বার জল সরবরাহ করা হত, সেখানে এখন সারা দিনে মাত্র এক বার দু’ঘণ্টার জন্য জল পাওয়া যাচ্ছে।
পুজালি পুরসভা সূত্রে খবর, পুজালিতে রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জল আসে। সেই জলে দু’টি রিজার্ভার ভর্তি হয়। মাটির তলার রিজার্ভারে ২৮৭২ কিলোলিটার এবং ওভারহেড ট্যাঙ্কে ১২৫০ কিলোলিটার জল ধরে। সব মিলিয়ে ৪১২২ কিলোলিটার জল মজুত থাকার কথা। এই জলই পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়। জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার সুজিত পাল জানান, যেখানে প্রতি দিন ২৪৫০ কিলোলিটার জল সরবরাহ করার কথা, সেখানে জল কম আসায় বর্তমানে ১৫০০ কিলোলিটারের মতো জল সরবরাহ করা হচ্ছে। তাঁর মতে, প্রতি দিন প্রায় ১০০০ কিলোলিটার জল কম সরবরাহ হচ্ছে। ফলে পুরসভাকে গাড়ি করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল সরবরাহের পাশাপাশি এই মরসুমেই ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ৩৫টি গভীর নলকূপ বসাতে হয়েছে।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা রেণুকা সাঁতরা বলেন, “প্রায় এক মাস জল পাইনি। মাত্র কয়েক দিন আগে এক ঘণ্টার জন্য জল এসেছিল। তাও জলের চাপ কম ছিল বলে সরু জল পড়ছিল।” আর এক বাসিন্দা মিনতি সাহার কথায়: “দিনে মাত্র এক বার জল আসছে। তা দিয়েই সারা দিনের কাজ চালাতে হচ্ছে। প্রয়োজনে পাড়ার নলকূপ থেকেই জল নিয়ে আসি।”
পুরপ্রধান কংগ্রেসের ফজলুল হক বলেন, “আগে এই ধরনের সমস্যা হয়নি। এ বছর গরম পড়তেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বজবজে যাঁরা পাইপলাইনের ভাল্ভ খুলবেন এবং বন্ধ করবেন তাঁরা কাজে গাফিলতি করছেন। যে সময় ভাল্ভ খুলে রাখার দরকার, সে সময় ভাল্ভ বন্ধ করে রাখছেন। ফলে আমরা জল পাচ্ছি না। জলের অপচয় বন্ধ করতে প্রতিটি বাড়িতে জলের মিটারও বসিয়েছি। কেএমডব্লিউএসএ-কে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”
বজবজ পুরসভার চেয়ারপার্সন ফুলু দে বলেন, “বজবজে লাইন বন্ধ করে রাখা হচ্ছে না। এমনিতেই গরমে জল সঙ্কট বাড়ে। পুজালি পুরসভা সব শেষে হওয়ায় জলের চাপ কমে যায়। এই জন্য জলও কম যায়। বজবজেও এই সমস্যা রয়েছে।” যদিও কেএমডব্লিউএসএ-র পক্ষ থেকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান হয়, যে পরিমাণ জল সরবরাহ করার কথা সেই পরিমাণ জলই সরবরাহ করা হচ্ছে। সরবরাহের সময় ভাল্ভও বন্ধ রাখা হচ্ছে না।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.