|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
বসেনি ‘অটো স্ক্রিন’ |
সংশয়ের নিকাশি |
কৌশিক ঘোষ |
কলকাতা পুরসভার নিকাশির পাঁচটি পাম্পিং স্টেশনের সব ক’টি নিকাশি নালায় প্লাস্টিক পরিষ্কারের জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ‘অটো স্ক্রিন’ এখনও বসল না। কবে এই কাজ শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেল। ফলে, পাম্পিং স্টেশনের নিকাশি নালায় প্লাস্টিক আটকে জল জমার সমস্যার আশঙ্কা থেকেই গেল।
কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ রাজীব দেব বলেন, “বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে যেখানে এই যন্ত্র লাগানো হবে সেখানে জায়গার সমস্যা হওয়ায় এই কাজ করতে দেরি হচ্ছে। তবে, অন্যান্য পাম্পিং স্টেশনে এগুলি বসানো হয়েছে। এই পাম্পিং স্টেশনটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাম্পিং স্টেশন। এই কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা হয় তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত ক্ষণ না কাজ শেষ হচ্ছে তত ক্ষণ পুরনো পদ্ধতিতেই প্লাস্টিক অপসারণ করা হবে।”
পাম্পিং স্টেশনে নিকাশি নালার মুখে প্লাস্টিক যাতে না আটকায় তার জন্য পুরসভার নিকাশির পাম্পিং স্টেশনে ‘অটো স্ক্রিন’ যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গত পুরবোর্ড। জমে যাওয়া প্লাস্টিক পরিষ্কার করতে পুরনো পদ্ধতিতেই লোক নিয়োগ করে তা পরিষ্কার করা হত। অনেক সময় এই কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধাও দেখা দেয়।
|
|
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০০৭-এর শেষের দিকে কলকাতা পুরসভার ১৮টি নিকাশি পাম্পিং স্টেশনের মধ্যে প্রথমে পাঁচটি পাম্পিং স্টেশনে এই যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পাম্পিং স্টেশনগুলি হল মানিকতলা, ধাপা লক, উল্টোডাঙা, মোমিনপুর এবং বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশন। এর পরে পুরসভার নিকাশি দফতর বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনে সমীক্ষা করে জানায়, মানিকতলায় পাম্পিং স্টেশনে নিকাশির প্রবেশপথের একটি মুখ রয়েছে। ধাপা লক, উল্টোডাঙা, মোমিনপুর এবং বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে যথাক্রমে চারটি, দু’টি, দু’টি এবং চারটি নিকাশির প্রবেশপথের জায়গা রয়েছে।
পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত মানিকতলা, মোমিনপুর, ধাপা এবং উল্টোডাঙা পাম্পিং স্টেশনে ‘অটো স্ক্রিন’ যন্ত্র বসানোর কাজ শেষ হলেও বালিগঞ্জের দু’টি নিকাশি নালার মুখে স্বয়ংক্রিয় মেশিন বসানোর কাজ বাকি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনের দু’টি প্রবেশপথে এই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসানো সম্ভব হল না কেন?
পুরকর্তৃপক্ষ জানান, আগে পুরসভার ইলেকট্রিক্যাল দফতর পাম্পিং স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ করলেও বর্তমানে পুরসভার প্ল্যানিং এবং ডেভেলপমেন্ট দফতরের তদারকিতে একটি বহিরাগত সংস্থা এই যন্ত্রগুলি পাম্পিং স্টেশনের নিকাশি নালার মুখে বসাচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এগুলি বসানোর পর পুরসভার ইলেকট্রিক্যাল দফতরকে তা হস্তান্তর করা হয়। প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতরের এক আধিকারিক জানান, যে সমস্ত পাম্পিং স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় মেশিন বসানোর কাজ হয়ে গিয়েছে সেগুলি পুরসভার ইলেকট্রিক্যাল দফতরকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই ইতিমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে। বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনেও যে দু’টি নিকাশি নালার মুখে এগুলি বসানো হয়েছে সেগুলি দেখাশোনা করে ইলেকট্রিক্যাল দফতর।
|
|
এই দু’টি জায়গায় ‘অটো ক্লিনিং মেশিন’ বসাতে সমস্যা কোথায়?
বালিগঞ্জে নিকাশির যে একটি নালাতে এই যন্ত্র বসানোর কথা সেখানে পুরসভার ইলেকট্রিক্যাল দফতর কাজ চালানোর জন্য একটি আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসিয়েছিল অনেক দিন আগেই। কিন্তু এই যন্ত্রটির মাধ্যমে ভাল ভাবে এই কাজ করা সম্ভব হয় না। নতুন এবং পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসাতে গেলে যেখানে এই যন্ত্রটি আছে, সেখানকার পুরনো নির্মাণ ভেঙে নতুন যন্ত্রের জন্য ফের নির্মাণ করতে হবে। এই কাজ সময়সাপেক্ষ ছাড়াও নতুন করে পুরকর্তৃপক্ষকে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সে ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা আছে। অন্য একটি নিকাশি নালার মুখে এই যন্ত্র বসাতে গিয়ে তার প্রবেশপথ তুলনামূলক ভাবে ছোট হয়ে গিয়েছে বলে ইলেকট্রিক্যাল দফতরের অভিযোগ। কিন্তু এই কাজ করতে গেলে আপাতত প্রবেশপথ কিছু দিন বন্ধ রেখে তা করতে হবে। আসন্ন বর্ষার কথা ভেবেই এই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাজীববাবু।
প্রসঙ্গত, ২০০৭-এ কয়েকটি অটো ক্লিনিং যন্ত্র বসানোর পরেই সেগুলি খারাপ হয়ে যায়। এর পরেই অটো ক্লিনিং যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন পুরসভা নির্দেশিকা দিয়ে এই যন্ত্র বসানো বন্ধ করে দেয়। দেড় বছর পরে ফের এই যন্ত্রগুলি পরীক্ষা করে পুরকর্তৃপক্ষ তা বসানোর অনুমতি দেন। বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় মেশিন বসানোর জন্য পুরকর্তৃপক্ষ প্রায় ১৬ কোটি টাকা ধার্য করেছেন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যেখানে অটো স্ক্রিন বসানোর কথা ছিল তার বেশির ভাগ জায়গাতেই তা বসে গিয়েছে। প্রযুক্তিগত কারণে যেখানে এই মেশিন বসানো সম্ভব হচ্ছে না সেখানে পুরনো পদ্ধতিতেই কাজ হবে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|