পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
শিয়রে সমন
বিপন্ন পাঠ
দেওয়ালের ফাটলে আগাছা গজিয়েছে। দীর্ঘ দিন মেরামতির অভাবে খসে পড়েছে সিমেন্টের চাঙড়। আবাসন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা পরিদর্শন করে বাড়িটিকে ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলেও ঘোষণা করেছেন।
তবুও এই বাড়িতেই চলছে দক্ষিণ দমদম পুরসভার সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) স্কুল।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ১৯৭০-এ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মতিঝিল হাউসিং এস্টেটের ভিতরে এই স্কুলবাড়িটি তৈরি হয়। সেখানে দু’টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল চলত। ৯০-এর দশকে ছাত্রছাত্রীর অভাবে স্কুল দু’টি বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। অভিযোগ, এই বাড়িতেই ২০০৬-’০৭-এ দক্ষিণ দমদম পুরসভা আইসিডিএস স্কুল চালু করে। সপ্তাহে ছয় দিন স্কুল চলে। মা এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু মিলিয়ে রোজ ৭০ জন আসেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। হয় রান্না ও খাওয়াদাওয়া। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়িটির অবস্থা খুবই খারাপ। কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। অনেক জায়গায় দেওয়াল ফেটে গিয়েছে, চাঙড় খসে পড়েছে। বর্ষায় ছাদ থেকে জলও পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মতিঝিল হাউসিং এস্টেটের ‘মতিঝিল টেন্যান্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ আবাসন দফতরের কাছে বাড়িটি ব্যবহারযোগ্য কি না জানতে চায়। পরিদর্শন করে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা বাড়িটিকে ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা করেন। দফতরের পাঠানো চিঠিটি অ্যাসোসিয়েশন বছরখানেক আগে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে পৌঁছে দেয়। অভিযোগ, এর পরেও পুরসভা স্কুলটি কোনও নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়নি।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুস্মিতা বিশ্বাস বলেন, “আইসিডিএস স্কুলটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে চলছে। তাই অন্য জায়গা না পেলেও স্কুলটি বন্ধ করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে বিপজ্জনক বাড়িতেই ঝুঁকি নিয়ে চালাতে হচ্ছে স্কুলটি। বিষয়টি পুরবোর্ডের মিটিংয়ে তুলেছি। জমিটি আবাসন দফতরের হলেও বাড়িটি কোন বিভাগ তৈরি করেছিল তার কোনও রেকর্ড পুরসভায় নেই। ফলে বাড়িটি মেরামতের জন্যও কাউকে বলা যাচ্ছে না।”
মতিঝিল টেন্যান্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুব্রত সরখেল বলেন, “স্কুলবাড়িটি মেরামতের জন্য অনেক দরবার করেও ফল হয়নি। প্রাথমিক স্কুল বিভাগে ওই স্কুলের কোনও রেকর্ড নেই। আবাসন দফতর বাড়িটিকে ব্যবহারের অনুপযুক্ত ঘোষণা করেছে।”
আবাসন দফতরের ৭ নম্বর কনস্ট্রাকশন ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পার্থ শিকদার বলেন, “জমি আমাদের হলেও বাড়িটি আমরা তৈরি করিনি। মতিঝিল টেন্যান্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্কুলবাড়িটির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা পরিদর্শন করে জানিয়েছি বাড়িটি বিপজ্জনক।”
স্কুলের এক অঙ্গনওয়ারি কর্মী কাকলি ঘোষবন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়: “সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। বর্ষা আসছে, বাচ্চাদের নিয়ে কী করব জানি না।” বাড়িটিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। গরমে পড়ুয়াদের কষ্ট পেতে হয়। এক পড়ুয়ার বাবা সঞ্জীব নাথ বলেন, “ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকি। বেশি দিন এই স্কুলে রাখব না। বিদ্যুতের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় পড়ুয়াদের কষ্ট হয়।” পুরপ্রধান তৃণমূলের অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “কাউন্সিলরের কাছ থেকে খবর পেয়ে খোঁজ করে জানতে পেরেছি বাড়িটির অবস্থা খুব খারাপ। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।”

ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.