পূর্ব কলকাতা
চালাবে কে
চলো নিয়মমতে...
নিয়ম আছে খাতাকলমেই। সে নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা পথচারী বা গাড়িচালকদের অনেকেরই নেই। পাশাপাশি সে নিয়ম কার্যকর করায় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাও বিশেষ নেই বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নিত্যযাত্রীদের।
ঘটনাস্থল বিধাননগর ও পাঁচ নম্বর সেক্টর।
এ বছরের গোড়াতেই কলকাতা পুলিশের ধাঁচে চালু হয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট। ফলে আলাদা করে সল্টলেক, পাঁচ নম্বর সেক্টর-সহ কমিশনারেটের ন’টি থানা এলাকায় ট্রাফিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক জন ডেপুটি কমিশনারের আওতায় কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করা হয়।
শুরু থেকেই সল্টলেক ও পাঁচ নম্বর সেক্টর এলাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশেষ ভাবনাচিন্তার কথা জানিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার পাশাপাশি গ্রিন পুলিশ নিয়োগ করে সল্টলেকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হয়। সে ভাবেই পাঁচ নম্বর সেক্টরের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সে সব কতটা কার্যকর হল তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
মাত্র তিনটি মোড়ে কিছু ক্ষণ দাঁড়ালেই ছবিটা সামনে চলে আসে।
পাঁচ নম্বর সেক্টরের কলেজ মোড়। চার মাথার এই মোড়ে সর্বদাই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে গ্রিন পুলিশ রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের একটি দলও নজর রাখে সর্বদা। অন্তত খাতায়-কলমে ব্যবস্থা সে রকমই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ছবিটা আগের মতোই। ট্রাফিক কর্মী ও সিগন্যাল চালু থাকা সত্ত্বেও যে যে দিকে খুশি গাড়ি ঘোরাচ্ছেন, পথচারীরাও যখনতখন নিয়ম না মেনে রাস্তা পার হচ্ছেন। মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, সাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ চোখে পড়ছে। মোটরবাইকে হেলমেট ছাড়া গেলেও তা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই।
এই পাঁচ নম্বর সেক্টরের মূল রাস্তাই হল রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে। এই ব্রডওয়ের কেবি-কেসি ও সুকান্তনগর, উইপ্রো মোড়, টেকনোপলিসের মোড় ও ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের সংযোগস্থলে গেলেও একই ছবি চোখে পড়বে।
উইপ্রো মোড়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন গড়িয়ার বাসিন্দা সুমিতাভ দাস। বললেন, “রাস্তা পার হওয়ার সময়েই ফোন এসেছে। ভুল হয়েছে। কিন্তু এখানে আলাদা করে পথচারীদের জন্য পারাপারের ব্যবস্থাও নেই।”
মূল সল্টলেকেও ছবিটা একই। তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ করুণাময়ীর ছবিটা।
এখানে গ্রিন পুলিশ থাকলেও যে যে কোনও দিক থেকে যে কোনও দিকে গাড়ি নিয়ে চলাচল করছেন। পথচারীরাও যেমন খুশি রাস্তা পার হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত রায় বলেন, “গ্রিন পুলিশকে কেউ আমলই দেয় না। কিছু দিন আগে অটোতে বেশি যাত্রী নিলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছিল। কিন্তু তার পরে যে-কে-সেই। এখানে এত মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু পথচারীদের পারাপারের ব্যবস্থা নেই। মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। বড় ঘটনা ঘটলে বোধ হয় প্রশাসনের টনক নড়বে।”
গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাসিন্দাদের সংগঠন ‘সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ বিধাননগরে নেই বললেই চলে। ট্রাফিকবাতিগুলি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। অনেকেই কলকাতায় আইন মানছেন, অথচ এখানে এসে মানছেন না। এখনই জরুরি ভিত্তিতে পথচারী ও গাড়িচালকদের সচেতনতা বাড়াতে আরও বেশি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।” বিধাননগর কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ভরতলাল মিনা বলেন, “বিধাননগরের ট্রাফিক-পরিকাঠামো পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে। যাঁরা নিয়ম ভাঙছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর আরও কিছু কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.